বিশ্বে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত হোক বাংলাদেশ, প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্রের
বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আশা পুনর্ব্যক্ত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সারাবিশ্বের নজর রয়েছে।
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (১০ এপ্রিল) স্থানীয় সময় বিকেলে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "অবশ্যই, আমাদের নজর রয়েছে... এই অঞ্চলসহ সারাবিশ্বের জন্য যেন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের শক্তিশালী উদাহরণ তৈরি হয়, সেজন্য বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব।"
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার প্রশংসা করে ব্লিঙ্কেন বলেন, দুই দেশের সম্পর্ককে আরও 'দৃঢ় ও গভীর' করতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য তার দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন চায়।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন "গণতন্ত্র আমাদের রক্তে মিশে আছে। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবমর্যাদা সমুন্নত রাখতে এ দেশের মানুষ রক্ত দিয়েছে।"
বৈঠকে তিনি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন এবং স্বচ্ছভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মার্কিন পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানায়। তবে এখানে কোনো পক্ষপাতমূলক পর্যবেক্ষককে জায়গা দেওয়া হবে না।
"অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব বিরোধী দলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে অঙ্গীকার করতে হবে। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করছি," যোগ করেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ককে বিস্তৃত, গতিশীল ও বহুমুখী উল্লেখ করে ড. মোমেন এই সম্পর্ককে আরও উন্নত, সম্প্রসারিত ও সুদৃঢ় করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে 'জয় বাংলা' দিয়ে শেষ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রেরিত উষ্ণ বার্তার জন্য ধন্যবাদ জানান।
গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে তাদের প্রাথমিক বক্তব্যে উভয় নেতা বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বিগত অর্ধ শতাব্দীর দৃঢ় সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে আগামী ৫০ বছরের জন্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে তারা অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব জোরদার ও বহুমুখীকরণ, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম অধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা এবং নির্বাচনসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশে শ্রম খাত সংস্কারে চলমান এবং সম্পন্ন কাজ সম্পর্কে ব্লিঙ্কেনকে অবহিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টাগুলোকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে।
ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশে শ্রম পরিস্থিতির আরও উন্নতির জন্য দুই দেশের মধ্যে চলমান যৌথ কর্মকাণ্ডের অগ্রগতির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সদ্ব্যবহার করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান।
ড. মোমেন মার্কিন সরকারকে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় উদার সহায়তা এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সাহায্য অব্যাহত রাখায় ধন্যবাদ জানান। তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির জন্য জোর দেন। এদিকে, সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উদারভাবে আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।
একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্বের ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি দণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পুনরায় অনুরোধ জানান।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে প্রেরিত উষ্ণ বার্তার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেরিত একটি চিঠি হস্তান্তর করেন।
উক্ত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, ডেপুটি চীফ অফ মিশন মিজ ফেরদৌসী শাহরিয়ার, মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলম এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কাউন্সেলর ডেরেক শোলে; জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট জুলিয়েটা ভালস নয়েস; গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রমবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট কারা ম্যাকডোনাল্ড; দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট আফরিন আক্তার সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন-এর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।