কেন চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি?
চৌদ্দ দিন হতে চলল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে, আর তা থাকছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার ছাড়িয়ে গিয়েছিল ৪১ ডিগ্রি যা তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবেই চিহ্নিত। আজকে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে, কারণ বিকাল ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিসের পক্ষ থেকে অতিপ্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সেইসঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান করতে বলা হচ্ছে সবাইকে। লেবুর শরবত আর স্যালাইন খাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু কী কারণে চুয়াডাঙ্গাই হটস্পট? কারণ জানতে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড যোগাযোগ করে আবহাওয়াবিদ এসএম কামরুল হাসানের সঙ্গে।
কামরুল হাসান বলেন, 'এটা এবারই প্রথম ঘটছে না। প্রতিবারই আমরা দেশের পশ্চিমাঞ্চল, মানে রাজশাহী, ঈশ্বরদী বা চুয়াডাঙ্গায় সর্বাধিক তাপমাত্রা রেকর্ড করে থাকি। বছর কয় আগে টানা ২৫ দিন ধরেই চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এবার কিছুটা ব্যতিক্রমের কথা বলে গেলে উল্লেখ করতে হয় আর্দ্রতার কথা। মানুষ কম ঘামছে বলে এখনো বাইরে যেতে পারছে। আজকে [শনিবার] ১২টায় আমরা খেয়াল করলাম ঢাকায় জলীয় বাষ্প ২২ শতাংশ, যদি এটা ৬০ শতাংশ হতো, তবে মানুষের ঘরের বাইরে যেতেও কষ্ট হতো।'
আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে, আরো অন্তত ৫-৬ দিন দেশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। সপ্তাহখানেক পর এটা কমে আসবে। ২১-২২ তারিখ বা তার পরে উত্তর-পূর্বাঞ্চল, সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমবে।
যে কারণে চুয়াডাঙ্গায় গরম বেশি পড়ে
মূলত ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই দেশের পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা অধিক হয়ে থাকে। আবহাওয়াবিদরা বলেন, বাংলাদেশে এপ্রিল হচ্ছে সবচেয়ে গরম মাস। এ সময় পৃথিবী সূর্য থেকে রশ্মি বা কিরণ পায় লম্বালম্বিভাবে। সূর্যকে কেন্দ্র করে যে কক্ষপথ ধরে পৃথিবী ঘুরছে, সেখানে পৃথিবীর অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ এই সময়ে সবচেয়ে কাছ থেকে সূর্যরশ্মি গ্রহণ করছে।
সোজা করে বলা যায়, এপ্রিল মাসে সূর্য থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে। সে কারণে এ সময়টায় সূর্যের তাপ বেশিই পড়ে এই অঞ্চলে।
তবে চুয়াডাঙ্গায় গরম সবচেয়ে বেশি কেন—এ প্রশ্নের উত্তরে কামরুল হাসান বলেন, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, খুলনা অঞ্চলজুড়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ সমভূমি। এই অঞ্চলের পশ্চিমে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সেখানেও বিশাল এলাকাজুড়ে সমভূমি। সমভূমি থাকার কারণেই এখানে তাপ প্রবাহিত হয় পরিবহন পদ্ধতিতে। ফলে সরাসরি তাপ লাগে, আর তাপমাত্রা থাকে বেশি।
এ অঞ্চলে গরম বেশি পড়ার দ্বিতীয় কারণ হলো, বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমঘাট হচ্ছে খুলনা, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চল। আর বঙ্গোপসাগর হচ্ছে জলীয় বাষ্পের উৎস। এই এলাকা দিয়ে জলীয়বাষ্প প্রবেশ করে বলে অন্য এলাকার তুলনায় এখানে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। তাই তাপমাত্রাও বেশি।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রার দিক থেকে এবার ঢাকাও রেকর্ড তৈরি করেছে। ১৯৬০ সালের পর ঢাকার তাপমাত্রা এবারই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে।