তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক এড়াতে ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর পরামর্শ
সারা দেশে টানা দুই সপ্তাহ ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন তাপমাত্রা ৪০-৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এতে করে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। তাপদাহে হিট স্ট্রোক থেকে সুরক্ষিত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, হিট স্ট্রোকের মূল ঝুঁকি মূলত যারা অনেকক্ষণ রোদে কাজ করে তাদের। মানব দেহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। প্রচণ্ড গরমে মানুষের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে প্রবল। এ অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে হিট স্ট্রোক হয়।
শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ১০৫-এর উপর উঠলে ঘাম হয় না, মাথা ব্যথা, অস্থিরতা, বুক ধড়ফড়, ক্লান্তি, অবসাদ হয়। এক সময় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়, অজ্ঞানও হয়ে যায় অনেকে। এটি বিপজ্জনক। এটি খুবই সিরিয়াস, সাথে সাথে চিকিৎসা না দিলে রোগী মারাও যেতে পারে।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, অপ্রয়োজনে বাইরে কেউ বের হবেন না। শ্রমিক, দোকানদার, রিকশাচালকসহ যারা বাইরে কাজ করেন, তাদের অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করতে হবে। কাজের ফাঁকে এক-দুই ঘণ্টা পর পর ১০-১৫ মিনিটের জন্য ছায়াযুক্ত স্থানে বসবেন। একটানা রোদের মধ্যে থাকা যাবে না। যারা রোজা রাখবে তাদের ইফতারের পর বার বার পানি খেতে হবে। লবণ মিশ্রিত পানি খেলে ভালো হয়, স্যালাইন খেতে পারেন। আর যারা রোজা রাখেন না বা অন্য ধর্মের মানুষ তারা একটু পর পর পানি খাবেন, লবণ মিশ্রিত পানি খাবেন। ডিহাইড্রেশন যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আরেকটা জরুরি বিষয় হলো, ঢিলেঢালা কাপড় পরতে হবে। জিন্স না পরাই ভালো।
বয়স্ক এবং যারা ডায়বেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন ক্রনিক রোগে ভোগেন, তাদের জন্য ঝুঁকিটা বেশি। তারা অপ্রয়োজনে বাইরে যাবেন না।
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে করণীয় বিষয়ে অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, কেউ যদি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে নিতে হবে। ঘরে থাকলে ফ্যান ও এসি চালু করে তাকে ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। বেশি বেশি পানি, ফলের জুস পান করাতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রেশার কমে যাওয়া, প্রস্রাব বন্ধ, পালস কমে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতেও পরামর্শ দেন তিনি।
শিশুদের বিষয়ে ডা আবদুল্লাহ বলেন, গরমে বাচ্চাদের জন্যও ঝুঁকি বেশি। এখন স্কুল বন্ধ তাই বাচ্চাদের বাইরে বের না করাই ভালো। বাচ্চাদের বেশি বেশি পানি খাওয়াতে হবে। তারা যেন রোদের মধ্যে অনেক বেশি দৌড়ঝাঁপ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, হিট স্ট্রোকের পাশাপাশি গরমে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস বাড়ছে। অ্যাজমা, হাঁপানি যাদের আছে, গরমের কারণে তাদের শ্বাসকষ্ট ওঠানামা করছে। তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে।