বকেয়া বেতন-বোনাস নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের ঝুঁকিতে ১৪৫ কারখানা: প্রতিবেদন
ঈদ-উল-ফিতরের আগে বকেয়া বেতন ও বোনাস নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের ঝুঁকিতে থাকায় ১৪৫টি কারখানার ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে পোশাক ও নিটওয়্যার প্রস্তুতকারকদের সংগঠন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
এ বিষয়ে যৌথভাবে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে ১৬ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় দুটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এবং কারখানার মালিকরা জানিয়েছেন, তারা এ প্রতিবেদন সম্পর্কে অবগত আছেন। ২০ এপ্রিলের মধ্যে সমস্ত বকেয়া ও বোনাস পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিক অসন্তোষের ঝুঁকিতে থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে দুটির অবস্থান ঢাকা শহরে, ২২টি অবস্থিত ঢাকা জেলায় এবং ৭২টি অবস্থিত গাজীপুর জেলায়।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের ২৭টি, চট্টগ্রামের ২০টি এবং ময়মনসিংহের দুটি কারখানার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বেশ কয়েকটি কারখানা আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাওয়ায় ঈদের আগে তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে। উৎপাদন ক্ষমতার নিচে কার্যক্রম চালানোয় কারখানাগুলোতে এ সংকট দেখা দিয়েছে।
ফজলে শামীম এহসান বলেন, বিকেএমইএ এসব কারখানা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং কারখানার মালিকদের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, "সাধারণত আমরা তাদের ব্যাংক থেকে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করি। শ্রমিক নেতারা কোনো অযৌক্তিক দাবি করলে আমরা তাদের সঙ্গেও কথা বলি।"
সম্প্রতি একটি কারখানার শ্রমিকরা ঈদুল ফিতরে ১১ দিনের ছুটি দাবি করেন। বিকেএমইএ সহ-সভাপতি বলেন, সমিতির প্রতিনিধিরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে এটা যৌক্তিক নয়।
তিনি বলেন, প্রতিবছর ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন দিতে অন্তত কয়েকটি কারখানায় তহবিল পরিচালনা করতে সমস্যা হয়। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত উল্লেখ্য সময়সীমার আগেই শ্রমিকদের বেতন দিতে সক্ষম হয়।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ বছরও প্রত্যেক শ্রমিক বেতন-বোনাস নিয়ে বাড়ি ফিরে তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দঘন অনুষ্ঠান উদযাপন করবেন।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে রপ্তানিকারকদের জন্য নগদ প্রণোদনা থেকে এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে। এতে করে কারখানা মালিকরা ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যেই এ অর্থ ছাড় করায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মঙ্গলবার থেকেই কারখানার মালিকদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ফারুক হাসান আরও বলেন, ঈদের আগে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বিগত বছরের মতো তাদের মনিটরিং টিম শিল্প পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
শ্রমিক অসন্তোষের ঝুঁকিতে থাকা আদিয়াত অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামিম মাহমুদ রিংকু টিবিএসকে বলেন, তিনি শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেছেন, কিন্তু ওভারটাইম ও ঈদ বোনাস এখনো পরিশোধ করেননি। তিনি আরো জানান, কারখানাটি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের এক্সিকিউটিভদের বেতন পরিশোধ করেছে। তাদের এক মাসের বেতন সাধারণত পরের মাসের ২০ তারিখের পর দেওয়া হয়।
তামিম মাহমুদ রিংকু বলেন, "আমরা ঈদের আগেই সব পাওনা পরিশোধের চেষ্টা করছি।"
৪৫৫ আরএমজি ইউনিট এখনও মার্চের বেতন পরিশোধ করেনি
শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর অধীনে ৪৫৫টি পোশাক কারখানা এখনও তাদের শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেনি।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিজিএমইএ'র ১,৬৩১ কারখানার মধ্যে ১,৩৮৭ কারখানা এবং বিকেএমইএ'র ৭০০টি কারখানার মধ্যে ৪৮৯টি কারখানা মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেছে।
১,১১১ বিজিএমইএ সদস্য এবং ৪০৮ বিকেএমইএ সদস্যসহ প্রায় ৬৬% পোশাক কারখানা তাদের শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দিয়েছে।
আরও দেখা গেছে, ৯,৬১৬টির মধ্যে ৭,৪৫৬টি আরএমজি, টেক্সটাইল, বিইপিজেড, পাটকল এবং অন্যান্য কারখানা মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ, সোমবার পর্যন্ত ২,১৬০টি কারখানা শ্রমিকদের মার্চের বেতন পরিশোধ করেনি।
শিল্প পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ৯,৬১৬টির মধ্যে ৬,৩৯৯টি (৬৬.৫৫%) কারখানা তাদের কর্মীদের উৎসব বোনাস দেয়নি।