অসহনীয় লোডশেডিংয়ে উত্তরে জনজীবন বিপর্যস্ত
তীব্র তাপদাহের মধ্যে অসহনীয় লোডশেডিংয়ে উত্তরের জনজীবন বিপর্যস্ত। দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকছে না গড়ে ৮ ঘণ্টার বেশি। অস্বাভাবিক গরমে স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। এমনকি বিদ্যুতের অভাবে রাতে অনেকে ঘুমাতেও পারছেন না। বুধবার উত্তরের চার জেলার মানুষের সাথে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
যদিও বগুড়ার পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) বগুড়া কার্যালয় দাবি করছে, আজ বুধবার বগুড়া অঞ্চলে কোনো লোডশেডিং নেই। গতকাল মঙ্গলবার ছিল। সেটার মাত্রাও কম। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ ১০ শতাংশ কম ছিল। সাধারণত বগুড়ায় তিনটি গ্রিডে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ২০০ মেগা ওয়াট। তবে এই হিসাব চাহিদার উপর কমবেশি হয়।
বগুড়া পিজিসিবি বিদ্যুতের যে হিসাব দিয়েছে তার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। মঙ্গলবার রাতে বগুড়ায় ৬ থেকে ৭ বার লোডশেডিং হয়েছে। গ্রামে এর পরিমাণ আরও বেশি বলে গ্রাহকরাই জানিয়েছেন।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার বাসিন্দা রেমি খাতুন বলেন, 'এখন কারেন্ট যাওয়া আসার খবর বলা মুশকিল। কিছুক্ষণ পরপর কারেন্ট যাচ্ছে। কারেন্ট গেলে তো আসার নাম নেই। এতে নারী ও শিশুদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। গর্ভবতী নারীদের অবস্থার আরও খারাপ। রোজা থেকে রান্না করে একটু বিশ্রাম নিব, তাও হয় না। অতিরিক্ত গরমের কারণে ছটফট করতে হয়। সামনে পরীক্ষা। পড়াশোনার প্রচুর চাপ। গরমের কারণে পড়াশোনা হচ্ছে না। কারেন্ট গেলে গরমের সাথে যুক্ত হচ্ছে মশার অত্যাচার।'
দেশে চলমান তাপদাহে পাবনার ঈশ্বরদী ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বলতে গেলে পুরো পাবনার তাপমাত্রা তীব্র। পাবনা শহরের বাসিন্দা খাদিজা খাতুন বলেন, 'আমার বাচ্চার বয়স আড়াই মাস। গরমের অত্যাচারে কারেন্ট গেলে ঘুমানোর উপায় নেই। তাপমাত্রা এতো বেশি যে দিনের বেলায় ঘরের বাইরে যাওয়া খুব কঠিন। ১২ ঘণ্টার মধ্যে ১০ ঘণ্টাই কারেন্ট থাকে না। সব মিলে অসহ্য এক যন্ত্রণাময় সময় কাটছে।'
নওগাঁর সদরের ভীমপুর গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা। গত দুই দিন ধরে শোডশেডিং আর গরমের কারণে ঘুমাতে পারছেন না। ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচেই বসে থেকেছেন। কারেন্ট যাওয়া-আসার মধ্যে থাকছে। তিনি বলেন, 'একবার কারেন্ট গেলে দেড় ঘণ্টা খবর নেই। আসলে আবার ৪০ মিনিট থাকছে। গড়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৯ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এভাবে থাকা খুব কঠিন। দেশে এতো উন্নয়ন দিয়ে কী হবে যদি ঘুমাতেই না পারি!'
বগুড়া শহরের বাসিন্দা সুস্মিতা কর্মকার ফ্রিল্যান্সিং করেন। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে তার কাজেও সমস্যা হচ্ছে। এই উদ্যোক্তা জানান, 'এখন লোডশেডিং অত্যাচারের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। একবার কারেন্ট এসে ফ্যান চালু না হতেই আবার চলে যাচ্ছে। কম্পিউটারে কাজ শুরুই করা যাচ্ছে না। লোডশেডিং দেখে মনে হচ্ছে আমরা ২০ বছর পিছিয়ে গেছি।'
জয়পুরহাটে শহরাঞ্চলে গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানান চম্পক কুমার। তিনি বলেন, 'গরম আর লোডশেডিংয়ের কারণে কেউ স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে না। ব্যবসা-বাণিজ্য বেহালে। এ জেলার মুরগীর ফার্মগুলোর অবস্থা যে কী, সেটাও বলা মুশকিল। শুধু এই অঞ্চলে নয় লোডশেডিংয়ে সারা দেশ কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।'
ধুনটের বেড়েরবাড়ি এলাকার ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন কৃষক আবু সাইদ। তিনি পাম্প দিয়ে এসব জমিতে সেচ দেন। জানালেন, 'ক'দিন আগে দিনের বেলায় কারেন্ট ভালো ছিল। কিন্তু দুইদিন থেকে মনে হচ্ছে এই খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। খুব জরুরি সময়ে এসে জমিতে সেচ দেওয়া কঠিন হচ্ছে। কৃষক ও কৃষি খাতকে বাঁচাতে হলে জমিতে সেচ দেওয়ার মতো কারেন্ট সরবরাহ করা দরকার।'
পিজিসিবি বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন বলেন, 'আজকে বগুড়ায় সকাল ১০টার পর থেকে লোডশেডিং নেই। কদিন ছিল। তবে লোডশেডিং বিভিন্ন কারণে দিতে হয়। টেকনিক্যাল অনেক বিষয় থাকে যা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না। এখন বিদ্যুতের ডিমান্ড বেড়েছে অনেক। আমাদের যন্ত্রগুলোর ক্যাপাসিটির কারণে অনেক বিদ্যুৎ চাহিদামতো সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এই সমস্যার ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষকে এককথায় বোঝানো কঠিন।'