বিআরটিএ’র অভিযান, জরিমানাকে ‘থোড়াই কেয়ার’ করছে বাস কাউন্টারগুলো
যাত্রীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে বাড়তি ভাড়া রাখার কারণে এশিয়া এয়ারকন পরিবহনের আরামবাগ কাউন্টারকে গতকাল ২০০০ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিআরটিএ'র একই টিম মিয়ামি এয়ারকন নামের অপর পরিবহন প্রতিষ্ঠানকেও একই পরিমাণে জরিমানা করে।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগে জরিমানা প্রদানের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দুইটি কাউন্টারেই বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে কাউন্টার দুইটিতে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।
কুমিল্লার টিকেটের দাম জানতে আরামবাগে এশিয়া এয়ারকনের কর্মী ভাড়া চাইলেন ৪০০ টাকা। নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে ১০০ টাকা বেশি চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কাউন্টার থেকে বলা হয়, ৪০০ টাকায়ই যেতে হবে। এর কম ভাড়ায় যেতে পারবেন না।
বাড়তি টাকা চেয়ে জরিমানা দেয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে রব্বানী নামের একজন কাউন্টার থেকে বলেন, 'ফেরার পথে বাস ফাঁকা আসায় লোকসান হয়ে যায়। ভাড়া সামান্য বেশি রাখলে সরকারের লোকজন জরিমানা আদায় করে। লোকসান হলে ত তারা টাকা দেয় না।'
মিয়ামি এয়ারকনের কাউন্টারে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অনেকটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে কাউন্টারের একজন কর্মী বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করে ২,০০০-৩,০০০ টাকা। আর যাত্রী প্রতি ১০০ টাকা বেশি আদায় করতে পারলে প্রতি ট্রিপে বাড়তি আয় প্রায় ৪,০০০ টাকা।
বিআরটিএ'র দপ্তরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে স্থাপন করা কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে অভিযোগ আসলেই ভ্রাম্যামাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কাউন্টারকে জরিমানা করা হচ্ছে। তবে জরিমানার পরিমাণ একেবারেই কম হওয়ায় ভাড়া নৈরাজ্য কমছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তানসহ রাজধানীর প্রতিটি দূরপাল্লার টার্মিনালেই বাস যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত নির্ধারিত ৩২০ টাকা ভাড়া আদায় করছে কেবল এনা পরিবহন। সৌখিন, আলম এশিয়া, বিনিময়, ইমামসহ বেশ কয়েকটি বাসে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা।
সায়েদাবাদ থেকে বরিশালের স্বাভাবিক সময়ে নন-এসি বাসের ভাড়া ৫০০-৫৫০ টাকা। গতকাল এ রুটের হানিফ, শ্যামলী, সাকুরা, বিএমএফ, গোল্ডেন লাইনসহ অধিকাংশ বাসেই ৭০০-৮০০ টাকা ভাড়া আদায় করেছে। আজও ৭০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করেছে কাউন্টারগুলো। সায়েদাবাদ থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত ৫৪০ টাকার ভাড়া একুশে এক্সপ্রেস পরিবহনে রাখা হচ্ছে ৬৫০ টাকা।
জানতে চাইলে বিআরটিএ'র কর্মকর্তারা বলছেন, বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ আসলেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে অভিযোগ খুবই কম আসছে বলে তারা জানান।
প্রচলিত আইনে জরিমানা করে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ করা যাবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, 'প্রতি সিটে ৪০০ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করতে পারলে একটি ট্রিপে বাড়তি আয় ২০,০০০ টাকা। কোম্পানির বাস যত ট্রিপ দেবে এই আয় ততগুণ বাড়বে। আর বিদ্যমান আইনে বাড়তি ভাড়ার কারণে জরিমানা আদায় করা যায় ২,০০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা। এই জরিমানায় বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ করা সম্ভব হবে না।'