সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে তৎপর বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। দলীয় নেতাকর্মীদেরও এই নির্বাচনে অংশ না নিতে দলের পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। তবে সিলেটে দলের এমন নির্দেশনা খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিশেষত কাউন্সিলর পদে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাধারণ ৪২টি ও সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী প্রার্থী হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতারা বলছেন, কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না। প্রার্থীরা দলীয় পরিচয়ও ব্যবহার করেন না। সাধারণ একজন নাগরিক হিসেবে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে যে কেউ এতে প্রার্থী হতে পারেন।
নির্বাচনে বিএনপি নেতাদেরও প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে ২২ এপ্রিল ঈদ জামাত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, 'সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের এক-তৃতীয়াংশই বিএনপি নেতা। তারা যে ভোটে আসছেন এটা খুবই ইতিবাচক'।
২০১৮ সালে সর্বশেষ নির্বাচনের সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ছিলো ২৭টি। ২০১১ সালে নগরের এলাকা বর্ধিত করে ৪২টি ওয়ার্ড করা হয়। গত নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে এবং ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের একটিতে বিএনপিপন্থীরা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
এরা হলেন- ১ নম্বর ওয়ার্ডে সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে রেজাউল হাসান লোদী কয়েস, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল।
এছাড়া সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন সদ্য বিদায়ী সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রোকসানা বেগম।
এই ছয়জন এবারের নির্বাচনেও প্রার্থী হচ্ছেন। এছাড়া নগরের সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডগুলোতে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী কাউন্সিলর প্রার্থী হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে নিজেদের ওয়ার্ডে ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে প্রার্থিতার জানান দিয়েছেন তারা। অনেকে পাড়ায় পাড়ায় সমর্থক ও ভোটারদের নিয়ে উঠোন বৈঠকও করছেন। এছাড়া গত রমজানে ইফতার সামগ্রী বিতরণ ও ইফতার পার্টি আয়োজনের মাধ্যমেও সরব ছিলেন বিএনপির সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী সদ্য বিদায়ী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
কাউন্সিলর রেজাউল হাসান বলেন, 'কাউন্সিলর পদের নির্বাচন দলীয় কোন বিষয় নয়। এটি দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নেই। এ পদে প্রার্থীরা ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেন'।
তিনি বলেন, আমি এই ওয়ার্ডের চারবারের কাউন্সিলর। দলমত নির্বিশেষে সবাই আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। ফলে এখানে আমার দলীয় পরিচয় মূখ্য নয়।
কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী বলেন, 'কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না। তাই এমন প্রার্থীদের দলীয় পরিচয়ে দেখার কিছু নেই। আমি একটি দল করলেও, কাউন্সিলর হিসেবে সবসময় দলমতের ঊর্ধ্বে থেকেছি। ফলে নির্বাচনের সময়ও আমার দলীয় পরিচয় কোন বাধা হবে না'।
২৫. ২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকসানা বেগম শাহনাজ বলেন, 'এলাকার মানুষজন আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তাদের মতামতকে উপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব না'।
৪০নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হতে আগ্রহী স্থানীয় বিএনপি নেতা আব্দুল হাছিব। তিনি বলেন, 'দলের পরিচয়ের চাইতেও বড় পরিচয় আমি এই এলাকার সন্তান। এলাকা ও এলাকাবাসীর উন্নয়নের স্বার্থেই আমি রাজনীতি করি। একই কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। এক্ষেত্রে দলীয় পরিচয় মুখ্য না। কাউন্সিলরদের ব্যাপারে দলেরও নমনীয় হওয়া উচিত'।
কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক বিএনপি নেতারা মাঠে তৎপরতা চালালেও মেয়র পদে এপর্যন্ত দলটির কেউ প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে প্রকাশ্য ঘোষণা দেননি। তবে বিএনপির অন্তত দুজন নেতা প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তারা হলেন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম।
প্রার্থিতার বিষয়টি বিবেচনা করছেন জানিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, 'আমার দল নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু, ভোটাররা আমাকে প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছেন। দল ও ভোটারদের কথা বিবেচনা করেই আমি একটি সিদ্ধান্ত নেব। মে মাসের শুরুর দিকেই তা সবাইকে জানাবো'।
বিএনপি নেতাদের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, 'বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনেই যাবে না। আমরা এখন সরকার পতনের আন্দোলনে আছি। আমাদের প্রত্যাশা, আরিফুল হকও সরকারের ফাঁদে পা দেবেন না। তবে কাউন্সিলর পদে যেহেতু দলীয় প্রতীকে ও দলীয় পরিচয়ে নির্বাচন হয় না – তাই সেখানে কারা প্রার্থী হচ্ছেন তা আমাদের দেখার বিষয় নয়'।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে।