জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় স্বস্তিতে আওয়ামী লীগ
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন পত্র বাতিল হওয়ায় এই সিটি নিয়ে এখন বেশ স্বস্তিতে আছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের বা কোনো স্বতন্ত্র শক্তিশাল প্রর্থী নেই।
নেতারা বলেন, গতবার মেয়র নির্বাচনের পর জাহাঙ্গীর রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক শক্তি সঞ্চয় করেন। বরখাস্ত হলেও তার অর্থ ও পেশির প্রভাবে গাজীপুরে একটি শক্তিশালী বলয় তৈরি করেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ টিবিএসকে বলেন, এবার ৫ সিটির প্রতিটিতেই সৎ, সাহসী ও যোগ্য প্রার্থী মনোনীত করেছে আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, "যোগ্যতার ক্যাটাগরিতে না পড়ায় এবার জাহাঙ্গীর দলীয় মনোনয়ন পাননি। ঋণ খেলাপি হওয়ায় নির্বাচন কর্মকর্তাও তার মনোনয়ন পত্র বাতিল করেছেন।"
মাহাবুবুল আলম হানিফ আরও বলেন, "জাহাঙ্গীর গাজীপুর আওয়ামী লীগের জন্য কোনো ফ্যাক্টর নয়। সেখানে আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ।"
এদিকে, আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাহাঙ্গীর স্বততন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগের জন্য একটি অস্তস্তিকর ব্যাপার তৈরি হতো। কিন্তু এখন অপাতত সেই শঙ্কা আর নেই।
এই নেতা আরও বলেন, "নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন দাখিলের আগে থেকে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে নানানভাবে জাহাঙ্গীরকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। যাতে করে সে নির্বাচন অংশ না নেয়।"
"কিন্তু জাহাঙ্গীর ধরেই নিয়েছিল সে বিএনপির একটি বড় অংশের সমর্থন নিয়ে এবারও মেয়র নির্বাচিত হবে। সে আশা থেকেই নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিল করে," যোগ করেন তিনি।
ঋণ খেলাপি হওয়ায় রোববার (৩০ এপ্রিল) জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
তবে মেয়র পদের জন্য জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আবারও নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দেন জাহাঙ্গীর আলম।
দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে ২০২১ সালের নভেম্বরে তাকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
তবে শর্ত সাপেক্ষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাহাঙ্গীরকে দলে পুনর্বহাল করা হয়।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তবে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানকে।
এদিকে, জাহাঙ্গীর আলম তার মনোনয়ন প্রত্যাখ্যানকে 'অগণতান্ত্রিক' বলে আখ্যা দিয়েছেন।
"আমি (জাহাঙ্গীর আলম) একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর জন্য মানবিক কারণে আমার নিজের জমি বন্ধক রেখেছিলাম। আমি ওই টাকা নিজে নেইনি এবং প্রতিষ্ঠানটি ওই টাকা পরিশোধ করেছে। এরপরেও আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে, যা অগণতান্ত্রিক। আমি কমিশনের কাছে নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচার পাইনি," বলেন জাহাঙ্গীর।
এ সময় তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলেও জানান।