ফের সাত মসজিদ রোডে সড়ক বিভাজকের গাছ কাটলো দক্ষিণ সিটি
অসহনীয় তাপদাহে নগরবাসী যেখানে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে, ঠিক সে সময়েই ঢাকার রাস্তার ডিভাইডারের গাছ কেটে ফেলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। দক্ষিণ সিটির এমন কার্যক্রমকে উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস বলে তাই দুষছেন পরিবেশবিদরা।
ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে কয়েকশ গাছ কেটে মিডিয়ান তৈরী করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। জানুয়ারিতে রাস্তাটির মিডিয়ানের কাজ শুরুর সময় একাংশের গাছ কাটার পরে এলাকাবাসী এবং পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের মুখে গাছ কাটা বন্ধ রাখে তারা। পরে সোমবার রাতে পুনরায় রাস্তাটির ডিভাইডারের গাছ কাটা শুরু করে দক্ষিণ সিটি।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বলছে, রাস্তার প্রশস্ততা কম থাকায় চওড়া মিডিয়ান রাখা সম্ভব নয়। তাই গাছ কেটে তিন ফুট চওড়া মিডিয়ান রেখে দ্রুত বর্ধনশীল মাঝারি আকারের গাছ লাগিয়ে দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের বরং উদ্যোগ নেওয়া উচিত কিভাবে নগর ফরেস্ট বাড়ানো যায়, কিন্তু এভাবে গাছ কেটে নগরের উন্নয়ন পরিবেশকে আরও সংকটের মধ্যে ফেলবে।
জানা যায়, জানুয়ারিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে সড়কদ্বীপ উন্নয়নের সময় বেশ কয়েকটি গাছ কেটে ফেলার পরে ৩১ জানুয়ারি এর প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করে শিশু শিক্ষার্থী, পরিবেশবাদী, সমাজকর্মী, গবেষক, শিক্ষক, শিল্পীরা। তখন তারা সড়কে গাছ কাটা বন্ধ করে কাটা গাছের স্থানে ৭ দিনের ভেতর গাছের চারা লাগানোর দাবি জানায়। এরপরে রাস্তার ডিভাইডারের গাছ কাটা বন্ধ রাখে দক্ষিণ সিটি।
এ ঘটনার প্রায় তিন মাস পরে এসে সোমবার রাত সাড়ে দশটার দিকে আবাহনী মাঠ সংলগ্ন সড়কদ্বীপের কিছু গাছ কেটে ট্রাকে নিয়ে সরিয়ে ফেলে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা। পরে স্থানীয়দের বাধায় গাছ কাটা বন্ধ রাখে তারা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ধানমন্ডি আবাহনী মাঠের সামনে থেকে ধানমন্ডি-১৫ নম্বর পর্যন্ত সাত মসজিদ রোডে বিভাজকের কয়েকশ গাছ কেটে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অনেকাংশেই শেষ হয়েছে ডিভাইডার তৈরীর কাজ। ডিভাইডারে যতোটু্কু জায়গা গাছ লাগানোর জন্য রাখা হয়েছে, এতে বড় আকারের কোনো গাছ বেড়ে ওঠা সম্ভব নয়।
স্থানীয় বাসিন্দা হাসিবুল হক টিবিএসকে বলেন, 'ধানমন্ডির এ রাস্তাটিতে তুলনামূলক গরম কম লাগতো কিন্তু গাছগুলো কেটে ফেলার পরে এলাকা মরুভূমির ন্যায় হয়ে পড়েছে। ঢাকায় একদিকে সবুজ জায়গা একেবারেই নগণ্য, আবার যা আছে তা ধ্বংস করলে নিঃশ্বাস নেওয়াই তো কষ্টকর হয়ে পড়বে।'
আর এক বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন বলেন, 'রাতে যখন চুপিসারে সিটি কর্পোরেশন গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তাদের কাছে অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে কিছুই দেখাতে পারেনি। সিটি কর্পোরেশন এভাবে রাস্তা উন্নয়নের নামে সবুজ এলাকা ধ্বংস করে আমাদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে না।'
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, '২০১৭ সালে আমাদের সার্ভেতে দেখেছিলাম রাজধানীর ৯টি এলাকার তাপমাত্রা তুলনামূলক অন্য এলাকা থেকে কম। যার প্রথমে ছিল বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান এবং ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা। কারণ ধানমন্ডি এলাকায় অন্যসব এলাকার তুলনায় গাছপালার সংখ্যা বেশি। কিন্তু এখন সেগুলো কেটে ফেলে সবচেয়ে উষ্ণতম এলাকা তেজগাঁও শিল্প এলাকার দিকেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।'
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, 'ঢাকা হিট আইল্যান্ডে পরিণত হওয়ার অন্যতম কারণের মধ্যে রয়েছে রাস্তা ও ভবন থেকে নির্গত হওয়া তাপ। রাস্তার পাশে এবং ডিভাইডারে পর্যাপ্ত গাছ থাকলে সে এলাকার তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। আমাদের উন্নত দেশের উদাহরণ টানার দরকার নেই, রাজধানীর অন্যসব এলাকার সাথে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার তুলনা করলেই পার্থক্য দেখতে পাবো। এজন্য অবশ্যই রাস্তার সবুজ বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং নতুন সবুজায়ন তৈরী করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'বিশ্বে তাপমাত্রার পার্থক্য থাকে ১ ডিগ্রী কিন্তু আমাদের সেন্ট্রাল ঢাকার সাথে আশেপাশের এলাকার তাপমাত্রার পার্থক্যই ৪ থেকে ৫ ডিগ্রী যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।'
কোনো এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ২৫ শতাংশ গাছ থাকার কথা থাকলেও ঢাকায় আছে ৭ শতাংশেরও কম। পর্যাপ্ত গাছপালা না থাকায় নগরে বায়ুদূষণের কারণে মানুষ প্রতিনিয়ত শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুস-ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া মানুষের জন্য যে পরিমাণ অক্সিজেন দরকার, তাও পাওয়া যাচ্ছে না গাছের অভাবে, বলেন তিনি।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের সাত মসজিদ রোডের পুরো মিডিয়ান পরিবর্তন করতে হয়েছে। এজন্য মিডিয়ানের অধিকাংশ গাছ কাটা পড়বে এবং আমরা কাজ শেষে দ্রুত বর্ধনশীল গাছ রোপণ করে দিব।'