আন্তর্জাতিক নার্স দিবস: দেশে চাহিদা অনুযায়ী নার্স আছে ২৪%
হাসপাতালে রোগীকে ওষুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব নার্সের। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ৭৬% কম নার্স নিয়েই চলছে দেশের চিকিৎসাসেবা।
এমনকি যারা দায়িত্বে আছেন, প্রশ্ন আছে তাদের সেবার মান নিয়েও। প্রয়োজন অনুযায়ী নার্স নিয়োগ ও নার্সের মান উন্নয়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স নিয়োগ দিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ বুলেটিন ২০২০ অনুসারে, বাংলাদেশে ১,০৮,০০০ জন নিবন্ধিত চিকিৎসক রয়েছেন। অর্থাৎ দেশে অন্তত ৩ লাখ ২৪ হাজার নার্স প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের (বিএনএমসি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত নার্সের সংখ্যা ৭৭,৮৩৮।
সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালে কর্মরত নার্সের সংখ্যা মাত্র ৪২,৩৩০। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবা একটি টিমওয়ার্ক। চিকিৎসকরা রোগীর রোগের ধরন এবং কী ধরনের চিকিৎসা লাগবে সেটি নির্ধারণ করেন। আর নার্সরাসে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন। সেজন্য প্রয়োজনীয় অনুযায়ী নার্স নিয়োগ এবং তাদের জন্য উপযোগী ওয়ার্কিং এনভারনমেন্ট তৈরি করতে হবে।
টঙ্গীর ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নার্সদের মান উন্নয়ন করতে হলে নার্সদের প্রতি রোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।"
তিনি আরো বলেন, "নার্সদেরকে দীর্ঘসময় কাজে রেখে কম বেতন দেওয়া যাবেনা। এছাড়া নার্সিং কারিকুলাম আরো ডেভলপ করতে হবে।"
সংখ্যাগত ঘাটতির পাশাপাশি আপত্তি রয়েছে নার্সদের দক্ষতা ও আচরণ নিয়েও। রোগীর ডাকে সাড়া না দেওয়া, যথাযথ দায়িত্ব পালন না করা, অর্থের বিনিময়ে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়াসহ অনেক অভিযোগই রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া আক্রান্ত এক বছর বয়সী শিশু সুমনকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন কুমিল্লা থেকে আসা ফাহমিদা আক্তার। হাসপাতালের সেবা নিয়ে তিনি বলেন, নার্সদের কয়েকবার ডাকলেও আসেন না, আবার রোগীকে ওষুধ খাইয়ে দিতে সাহায্যের বেলায়ও তাদের আপত্তি।
নার্সদের এ ধরনের অপেশাদার আচরণের কারণ জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স কৃষ্ণা বিশ্বাস বলেন, এসবের জন্য কাজের চাপ ও পরিবেশ অনেকাংশেই দায়ী। "জনবল সংকটের কারণে একজনকেই অনেক রোগী সামলাতে হয়। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রোগীকে দেখতে আসা আত্মীয়স্বজন। রোগীর তুলনায় অ্যাটেনডেন্টদের সঙ্গে আমাদের বেশি কথা বলতে হয়," বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, "এসবের কারণে আমরা রোগীর চাহিদা ঠিকমতো পূরণ করতে পারি না। যদি একজন নার্সকে দু-তিনজন করে রোগী সামলাতে হতো, তাহলে কাজের পরিবেশও ভালো হতো। আমাদের বিরুদ্ধে মানুষের অভিযোগও থাকত না।"
সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস এর সেক্রেটারি জেনারেল সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, "নিরবিচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে অধিক সংখ্যক নার্স নিয়োগ দিতে হবে। নার্সিং শিক্ষা ও এই সেক্টরকে আধুনিকায়ন করতে হবে।"
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর বলেন, নার্স সংকট নিরসনে সরকার করোনার সময় ৫ হাজার ৫৪ জন নার্স নিয়োগ দিয়েছে। একইসঙ্গে ২০২১ সালে ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আরও ১০ হাজার নিয়োগের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে।
তিনি আরো জানান, নার্সদের উচ্চতর শিক্ষা নিশ্চিতে এমএসসি নার্সিং কোর্স চালুসহ সরকারিভাবে নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশে সরকারি ৬৭টি ও বেসরকারি ৩৭২টি নার্সিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মবার্ষিকীতে (১২ মে) প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালিত হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো, "আমাদের নার্স। আমাদের ভবিষ্যৎ।"