ঘূর্ণিঝড় মোখা: ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ — উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের তথ্যমতে, বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় মোখার প্রভাবে ১০–২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
এর মধ্যে কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১৫–২০ ফুট, নোয়াখালী-চট্টগ্রামের উপকূলে ১০–১২ ফুট, বরিশালের উপকূলে ৮–১২ ফুট ও খুলনাঞ্চলের উপকূলে ৭–১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত ১৫ বছরে উপকূলে বেশ কয়েকটি ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সিডর (২০০৭), আইলা (২০০৯), মহাসেন (২০১৩), রোয়ানু (২০১৬), ফণী (২০১৯), বুলবুল (২০১৯), আম্ফান (২০২০), ইয়াস (২০২১), সিত্রাং (২০২২) ইত্যাদি।
এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলবর্তী এলাকার অনেক বেড়িবাঁধ। সংস্কারের অভাবে অনেক বেড়িবাঁধ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে আসন্ন মোখায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা।
খুলনাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলার উপকূলীয় আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলা; খুলনা জেলার দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা, এবং বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা উপজেলার কয়েকটি এলাকার মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের কারণে প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন।
শ্যামনগর উপজেলার উপকূল-বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই বেল্টের গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, কাশিমাড়ী এলাকার কয়েকটি বেড়িবাঁধ অতি-ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রয়েছে বুড়িগোয়ালিনী এলাকায়। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ভবতোষ মণ্ডল বলেন, 'আমাদের বুড়িগোয়ালিনীর দুর্গাবাটিতে দুই জায়গায় ও দাতিনাখালীসহ মোট তিনটি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।'
আটুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু বলেন, 'আটুলিয়া ইউনিয়নে তিনটি পয়েন্টে পাউবো'র বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মোখা আঘাত হানলে এসব জায়গায় বাঁধ টিকবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।'
সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার কিছু অংশের বেড়িবাঁধ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের (পওর) দায়িত্বে রয়েছে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১। ওই অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, 'আমাদের আওতাধীন মোট ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ২০ কিলোমিটার, আর অতি-ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে তিন কিলোমিটার। ঝড়ের আভাস পেয়ে ওই তিন কিলোমিটার সংস্কার করা হচ্ছে।'
অন্যদিকে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও আশাশুনি উপজেলায় বেড়িবাঁধের অতিঝুঁকিপূর্ণ অংশ সংস্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২।
সাতক্ষীরার মতো একই অবস্থা খুলনার কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় নদীতে পানি বাড়লে ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, 'পাইকগাছার তুলনায় কয়রা উপজেলায় আমাদের বেশি নজর রাখতে হচ্ছে। কারণ ওই এলাকাটি সুন্দরবন সংলগ্ন ও তার তিনদিকে কপোতাক্ষ এবং শাকবাড়িয়া নদী রয়েছে। বড় আকারের জলোচ্ছ্বাস হলে ভালো বাঁধও মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে।'
পাউবো'র সূত্রে জানা গেছে, খুলনার দাকোপ উপজেলার মোট ৩৭৯ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ছয় কিলোমিটার, এবং অতি-ঝুঁকিপূর্ণ তিন কিলোমিটার। বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকাগুলোরতে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ১২ কিলোমিটার, আর অতিঝুঁকিপূর্ণ সাত কিলোমিটার।