পানির দামে অনিয়মসহ ওয়াসা এমডির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, মন্ত্রণালয়ে চিঠি বোর্ড চেয়ারম্যানের
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে পানি উৎপাদনে খরচ বেশি দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ সহ ওয়াসাকে 'দুর্নীতির আখড়া'য় পরিণত করা, অসহযোগিতা, অসদাচরণ এবং আইন অমান্যসহ নানা অভিযোগ এনে সংস্থাটির বোর্ড চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। তবে অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন এমডি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খান বলেন," আমি তো কিছুই বলিনি, কিছুই করি নি। সো নো কমেন্ট। আমার কোনো মন্তব্য নেই এখানে।"
গত বুধবার ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দেয়া লিখিত অভিযোগে বলেন, তাকসিম এ খান ঢাকা ওয়াসাকে অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। তিনি ওয়াসাকে ব্যক্তিগত সম্পদের মতো 'স্বৈরাচারী' কায়দায় পরিচালনা করেন। তাকসিম ওয়াসা বোর্ডকে দীর্ঘ দিন ধরে অবমাননা করলেও বর্তমানে তা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো অভিযোগের বিষয়ে গোলাম মোস্তফা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে চলা ঢাকা ওয়াসায় চলা অনিয়ম-দুর্নীতি বর্তমানে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ওয়াসা এমডি কোনো নিয়ম-কানুন মানেন না। নিজের মতো করে খাত দেখিয়ে খরচ করেন কিন্তু কোনো হিসাব দিতে পারেন না। ওয়াসা বোর্ডকেও তিনি কোনো পাত্তা দেন না। সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী কায়দায় তিনি ওয়াসা চালাচ্ছেন। এ বিষয়টিই আমি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। আশা করি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে।"
তবে মন্ত্রণালয় ওয়াসার এমডির পক্ষ নিচ্ছে বলে মনে করছেন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, "মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে ফোন করে এমনটাও বলা হয়েছে যে, 'তাহলে কি ওয়াসা বোর্ড ভেঙ্গে দিবো।"
অভিযোগের বিষয়ে তাকসিম এ খান টিবিএসকে বলেন, 'আমি কোনো ব্যাপারেই মন্তব্য করবো না।'
এর আগে গত ১১ মে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছিল ওয়াসার কর্মচারী ইউনিয়নগুলো। তার কয়েকদিন পর বুধবার স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দেন বোর্ড চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল। অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকেও।
ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দ্বন্দ্ব আগে থেকেই চলছে। এ মাসের শুরুতে এক টিভি টক শোতে ওয়াসার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেন বোর্ড চেয়ারম্যান।
তাতে ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিব্রত ও হেয় করা হয়েছে অভিযোগ তুলে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেয় ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা ওয়াসা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ঢাকা ওয়াসা ইঞ্জিনিয়ার্স ইউনিয়ন।
পানির মূল্য নির্ধারণে ওয়াসার হিসাব ভুল উল্লেখ করে ওয়াসার এক বোর্ড মেম্বার নাম প্রকাশ না করা শর্তে টিবিএসকে বলেন, "আমরা ওয়াসার পানি উৎপাদন খরচ হিসাব করে দেখেছি প্রতি ইউনিট পানি উৎপাদনে খরচ হয় ১৬ টাকার মতো কিন্তু সেখানে ওয়াসা খরচ দেখায় ২৭/২৮ টাকা। যে কেউ-ই বার্ষিক রিপোর্ট এনালাইসিস করলে এ খরচ বের করতে পারবেন।"
তবে 'এফিশিয়েন্ট ওয়ে'তে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা করা হলে খরচ অনেক কমানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে মন্ত্রণালয়ে দেওয়া অভিযোগে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, "ঢাকা ওয়াসার ভেতরের অবস্থা খুবই খারাপ। যে ব্যক্তিই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাকেই তিনি চাকরি থেকে অপসারণ করেন। এমডি ঢাকা ওয়াসার বাজেটে কোটি কোটি টাকা বিভিন্নভাবে লুকিয়ে রাখেন এবং ইচ্ছামতো বাজেট-বহির্ভূত খরচ করেন। এমডি তাকসিম ক্ষমতার দাপট দেখাতে নিজের সুবিধামতো প্রশাসন তৈরি করে রেখেছেন।"
অভিযোগে গোলাম মোস্তফা বলেন, "বোর্ড সচিব নামে ওয়াসার অর্গানোগ্রামে পদ না থাকলেও তাকসিম নিজের আজ্ঞাবহ একজন প্রকৌশলীকে এ পদে দেওয়াসহ অনেক দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। বলা যায় তিনিই প্রশাসনের প্রধান। অথচ ওয়াসায় একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ডিএমডি (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) আছেন। তিনি স্ব উদ্যোগে অনেক কাজ শুরু করায় এবং বেশকিছু অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ায় এমডি তাকে সাইডলাইনে রেখে দিয়েছেন, তাকে বরখাস্ত করার চেষ্টাও করেছেন ভুয়া অভিযোগ তুলে।"
ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করেন, ওয়াসা এমডি ৩ কোটিরও বেশি টাকা দিয়ে অডিট ফার্ম নিয়োগ দেন। তবে আইনে আছে ২ কোটি টাকার বেশিতে দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, "ড্রিংক ওয়েলের মাধ্যমে চলা এটিএম বুথের মাধ্যমে খাবার পানি বিক্রির প্রকল্পের কোনো কাগজ বোর্ড সভায় অনুমদিত হয়নি। এছাড়া এ প্রকল্পের প্রতিটি এটিএম বুথ তৈরীতে ৭-৮ লাখ টাকা খরচ হয় এবং সেখানে কর্মরত ব্যক্তিদের বেতন ওয়াসা থেকেই দেওয়া হয়। তবে সেখান থেকে আয়ের কোনো খাত দেখানো হয় না। এ বিষয়ে বোর্ড মেম্বাররা জবাব চাইলেও ওয়াসা এমডি সদুত্তর দিতে পারেনি।"