রাজধানীতে সবজির দাম পাইকারির চেয়ে খুচরায় কেজিতে ১০-২০ টাকা বেশি
শুক্রবার (১৯ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক কেজি ঢেঁড়শ পাইকারি বিক্রি হতে দেখা গেছে ২০ টাকায়। সেখান থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে মগবাজারে একই ঢেঁড়স বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি। নিউ ইস্কাটনের দিলু রোড ও হাতিরপুল বাজারেও একই দাম। এতটুকু দূরত্বে গিয়েই বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ১০ থেকে ২০ টাকা।
শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর ৪টি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজার ভেদে বিক্রেতারা নিজেদের মতো করে দাম হাঁকাচ্ছেন। অধিকাংশ সবজির দামই কারওয়ান বাজারের পাইকরি বাজার থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেশি, কোনোটি আবার বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে।
কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি করলা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, পোটল ৫০ টাকা, পেঁপেঁ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, আলু ৩৫ টাকা এবং মাঝারি আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
অথচ দিলু রোড, হাতিরপুল ও নয়াটোলা, মগবাজারের বউ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি করলা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পেঁপে ৭০ টাকা, পোটল ৮০ টাকা, আলু ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং মাঝারি আকারের লাউ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, কারওয়ান বাজারের খুচরাতেও কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব সবজি।
সবজির পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে দাম বেশি রাখা হচ্ছে কেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মগবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. হৃদয় বলেন, পরিবহন খরচের সঙ্গে দোকান ভাড়া আছে। তাছাড়া যে সব সবজি কেনা, হয় তার কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়।
"আমরা দোকানে দুইজন নিয়মিত বসি। তাই সবকিছুর খরচ রেখে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে না পারলে পোষায় না," বলেন তিনি।
কারওয়ান বাজারে বাজার করতে এসেছেন মোহম্মদ সহিদুল। তিনি বলেন, সবজি পাইকারি কিনতে হলে সর্বনিম্ন ৫ কেজি নিতে হয়। আর এক প্রকার সবজি এতগুলো প্রয়োজন হয় না, তাই চাইলেও কম দামে কেনা যায় না।
তিনি বলেন, "বেগুন পাইকরি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, অথচ কারওয়ান বাজারেই খুচরা কিনলাম ৬০ টাকা কেজি।"
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, "মানিকগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ২ হাজার থেকে ৩ হাজার কেজি কাঁচামাল ট্রাকে করে কারওয়ান বাজার এনে বিক্রি করি। গত সপ্তাহের তুলনায় পাইকারিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে সবজির দাম। চিচিঙ্গা, করলা, ধুন্দল ৪০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে, যেটা গত সপ্তাহে বিক্রি করেছি ৬০ টাকা।"
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান টিবিএসকে এ বলেন, "সবজির একটা অংশ নষ্ট হয়ে যায়, দাম বেড়ে যাওয়ার এটি একটি কারণ। আর খুচরা বিক্রেতারা যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি করে, সেটা দিয়ে তাদের জীবনযাত্রার খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়ে। আবার এরসঙ্গে দোকানের ভাড়াও রয়েছে। সব মিলিয়ে এসব কারণেই মনেহয় খুচরা বাজারে দাম বেড়ে গেছে।"
গোলাম রহমান ফার্মাস কো-অপারেটিভ পদ্ধতি চালুর পরামর্শ দিয়ে বলেন, "কৃষকের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তার কাছে আসতে অনেক হাতবদল হয়। এতে একদিকে পণ্যের দাম বাড়ে ও পণ্য নষ্টও হয়। যদি ফার্মাস কো-অপারেটিভ করা যায়। তাহলে সহজে ভোক্তাদের সঙ্গে কৃষকর সেতুবন্ধন হবে। কৃষকও ভালো দাম পাবে, ভোক্তাও মানসম্মত সবজি পাবে।"
পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৮০ টাকা কেজি
এদিকে, রাজধানীর কাঁচাবাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ১৩ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় পৌঁছেছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ৭০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, "ঈদের আগে আমরা ২৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতাম এখন ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। গত সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৭০ টাকা।"
তিনি আরও বলেন, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৩ টাকা পাইকারি দরে কিনতে হচ্ছে।
বাজার করতে আসা মোহাম্মদ শহীদুল বলেন, "দাম বেশি দেখে আধা কেজি পেঁয়াজ কিনলাম। এক কেজি কিনতে চেয়েছিলাম।"
পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে গোলাম রহমান বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ আছে। এরপরেও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এখন যে দাম বাড়ছে এতে কৃষক উপকৃত হচ্ছে না, মধ্যসত্বভোগীরা উপকৃত হচ্ছে।
"আমরা প্রস্তাব করেছিলাম পেঁয়াজের মৌসুমে ইমপোর্ট ডিউটি উচ্চহারে বসানো, আর যখন মৌসুম শেষ হয়ে যাবে তখন ওটা কমিয়ে দেওয়া বা তুলে নেওয়া। এটা করা হলে দাম নিয়ন্ত্রণ হবে অটোমেটিক।"
"প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন না করে সরকার পেঁয়াজ আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করেছে। আসলে আমদানির এ বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছেই থাকা উচিত। এখন যদি ২ থেকে ৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমাদানির অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়, কালই পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা কমে যাবে," যোগ করেন তিনি।