গাজীপুর সিটি নির্বাচন: ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম, মাঠে শত শত কর্মী
সহিংসতা, ভোটারদের ভয়ভীতি ও কারচুপির আশঙ্কার মধ্যেই সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের। কিন্তু ভোটগ্রহণ শুরুর ২ ঘণ্টা পর থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কমতে দেখা গেছে।
ইভিএমের টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণেও সামগ্রিকভাবে ভোট প্রদানের গতি কিছুটা ধীর বলে চোখে পড়েছে টিবিএস প্রতিবেদকদের।
ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
৮ নং ওয়ার্ডের দেউলিয়াবাড়ী আ ক ম মোজাম্মেল হক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে বুথ রয়েছে ৯টি। মোট ভোটার ২৬২২ জন।
বেলা ১১টা ৪৫ এর দিকে ভোটারের উপস্থিতি সেখানে একেবারেই নগণ্য দেখা গেলেও মাঠে ছিল কয়েকশ নেতাকর্মী।
১১টা বেজে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ৯টি বুথে ভোট পড়েছে ৩০%।
প্রিজাইডিং অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, "আমাদের এ মাঠকে ঘিরে ৪টি কেন্দ্র তাই একটু জনসমাগম বেশি। এ পর্যন্ত ৩০% ভোট পড়েছে।"
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ২৬২২টি ভোটের মধ্যে ৭৮৭টি ভোট পড়েছে। এখন ভোটার সংখ্যা কমে গিয়েছে। দুপুরের পর বাড়তে পারে।
প্রায় দুই ঘণ্টা অচল ছিল বুথ
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৮ নং ওয়ার্ডের কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ৬ নং বুথের ইভিএম মেশিন প্রায় দুই ঘণ্টা বিকল ছিল। এতে অন্য বুথের ভোটাররা ভোট প্রদান শেষ করলেও এখানে ৩০-৪০ জনের লাইন জমে যায়।
সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর ১ ঘণ্টা ভোট গ্রহণ শেষে মেশিন বিকল হয়ে যায়। সাড়ে ১১টার দিকে নতুন মেশিন এনে সংযুক্ত করা হয়।
বিউটি আক্তার নামে এক ভোটার টিবিএসকে বলেন, "প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আটকে আছি। লাইনের লোক শেষ হচ্ছে না। প্রায় দুই ঘণ্টা এ বুথে ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল।"
চিনু রানী সরকার টিবিএসকে বলেন, "সকালে শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পরেই ভোট নেওয়া বন্ধ করে দেয়।"
সাথী আক্তার বলেন, "সকালে ৩০-৩৫ জনের মতো ভোট দিতে পেরেছে। এখন চালু হওয়ার পরে ৪-৫ জন দিলেন।"
প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল মতিন টিবিএসকে বলেন, "এখানে মেশিনে সমস্যা হয়েছিল ১০-১৫ মিনিটের জন্য। পরে আমরা নতুন মেশিন লাগিয়েছি। সেটির মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চলছে।"
এদিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সকালে এ সিটি নির্বাচনের সিসিটিভি মনিটরিং শুরু করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ও নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।
এর আগে বুধবার নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা গণমাধ্যমকে বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে এবং বৃহস্পতিবার ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারবেন।
নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বুধবার গণমাধ্যমকে জানান, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৩ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকবে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুর চৌরাস্তা সংলগ্ন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে কাউন্সিলর প্রার্থী আবু সাঈদ মন্ডল ও মেয়র প্রার্থী গাজী আতাউর রহমানের সমর্থকদের জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আনসার সদস্যরা পরে তাদের ধাওয়া দেন।
সেখানেই বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মোসলেহ উদ্দিন ও আবু সাঈদ মন্ডলের সমর্থকদের মধ্যে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরও পরে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
প্রথমবার ইভিএমে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে রবিউল ইসলাম নামে একজন ভোটার বলেন, "ইভিএমে ভোট দিয়ে তেমন অসুবিধা হয়নি। তবে ইভিএম নিয়ে আমার ব্যক্তিগতভাবে আস্থার সংকট আছে। ভোট তো দিয়েছি, এখন এই ভোটটা সুরক্ষিত থাকলেই হলো।"
ভোট দিতে আসা বেসরকারি চাকুরিজীবী দেলোয়ার হোসেন বলেন, "আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একটি শঙ্কা ছিল, তাই সকালে আসিনি। বেলা হওয়ার পর যখন দেখলাম পরিবেশ মোটামুটি ভালো, তখন এলাম।"
ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই ভোটকেন্দ্রে আসতে শুরু করেন ভোটাররা
অন্তত তিনটি কেন্দ্রে সকাল ৭টা থেকেই ভোটারদের আসতে দেখা যায়। সেখানে প্রায় এক হাজারের বেশি ভোটারকে উপস্থিত হয়ে লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়।
ভোট দিতে আসা মিম আক্তার বলেন, "আমাদের বাসা কাছাকাছি, তাই বাড়ির সবাই মিলে আগেই চলে এসেছি ভোট দিতে।"
মিম এবারই প্রথমবারের মতো তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। তিনি বলেন, "নতুন ভোটার তাই বেশি উৎসাহ নিয়ে এসেছি ভোট দিতে। তবে ইভিএম সম্পর্কে ধারণা নেই।"
তিনিসহ ৮-৯ জন মিলে আসেন ভোটকেন্দ্রে। তারা জানান, যিনি তাদের এলাকার জন্য কাজ করবেন তারাই যেন বিজয়ী হন এবং তাদের ভোট যোগ্য ব্যক্তিকেই পছন্দ অনুযায়ী দিবেন।
তবে কয়েকটি কেন্দ্রের সিসিটিভি ক্যামেরা কাজ করছে না বলে জানা যায়। নির্বাচন কমিশন অতিসত্ত্বর স্থানীয় দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে দেখতে বলে যে, এটি কি টেকনিক্যাল সমস্যা নাকি 'ইচ্ছাকৃতভাবে' করা। ইচ্ছাকৃত হলে কেন্দ্রগুলোর ভোট বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানান ইসি আলমগীর।
তবে আগত ভোটারদের অধিকাংশের গলাতেই বিভিন্ন প্রার্থীর কার্ড ঝুলানো অবস্থায় দেখা যায়।
এছাড়াও কেন্দ্রগুলোর সামনে এবং ১ থেকে ৬ নং কেন্দ্রের আশেপাশের সড়কে জায়েদা খাতুনের কোনো পোস্টার দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীদের পোস্টার দেখা গেলেও জায়েদার কোনো পোস্টার দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য, ৫৭টি ওয়ার্ডে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন ভোটার নিয়ে গঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন ও কাউন্সিলর পদে ২৪৮ জন এবং নারী কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
(এটি একটি ডেভেলপিং স্টোরি এবং কিছুক্ষণ পরপর আপডেট করা হচ্ছে)