সিলেট সিটি নির্বাচন: আয় যৎসামান্য, নির্বাচনের খরচ আসবে কোথা থেকে?
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বছরে আয় মাত্র ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪ টাকা। এ হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও ব্যবসায়ী এই প্রার্থীর মাসিক আয় প্রায় ২৪ হাজার টাকা।
এই সিটিতে ইসলাম আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের আয় আনোয়ারুজ্জামান থেকে একটু বেশি। বছরে মাত্র ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মাহমুদুল হাসানও পেশায় ব্যবসায়ী।
নির্বাচন কমিশনে মনোনয়পত্রের সাথে জমা দেওয়া হলফনামায় আয়ের এমন হিসাবই দিয়েছেন সিলেটের এই দুই প্রার্থী। কিন্তু যৎসামান্য এই আয় দিয়ে নির্বাচনের ব্যয় তারা কীভাবে মেটাবেন তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
নিজের তেমন কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই উল্লেখ করে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের অনুদানেই তিনি নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে দলটির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। হলফনামায় নিজের পেশা ব্যবসায়ী উল্লেখ করে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪ টাকা। এরমেধ্যে কৃষিখাত থেকে আয় ১ লাখ, বাড়ি/দোকান ভাড়া থেকে আয় ৪৭ হাজার ৫৪২ টাকা এবং ব্যবসা থেকে আয় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৪২ টাকা।
এছাড়া, আনোয়ারুজ্জামানের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদই আছে ৪১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮ টাকা। এর বাইরে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে দুটি টিভি, একটি রেফ্রিজারেটর, দুটি এয়ার কন্ডিশনার (এসি) এবং দুই সেট সোফা, চারটি খাট, একটি টেবিল, ১০টি চেয়ার ও দুটি আলমারি আছে।
তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ৪৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। আনোয়ারুজ্জামানের স্থাবর সম্পদের মধ্যে তিন বিঘা কৃষিজমি, ২৩ শতক অকৃষিজমি, একটি দালান ও একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে। তবে তার কোনো দায় বা দেনা নেই। তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলাও নেই।
অপরদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলের ২ কোটি ৩৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৬৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। পাশাপাশি অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার একটি বিএমডব্লিউ, একটি টয়োটা প্রাডো, চারটি কার্গো ভ্যান, আটটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি মোটরসাইকেল আছে। এছাড়া তার স্ত্রীর নামে ২১ লাখ ১২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে।
বাবুলের স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১৩৫ দশমিক ৭৮ শতক অকৃষিজমি, একটি ফ্ল্যাট এবং চারটি দালান ও টিনশেড বাড়ি আছে। এর পাশপাশি তার ঋণ রয়েছে ৫ কোটি ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৭ টাকা।
অন্যদিকে, হলফনামায় দেওয়া ইসলাম আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে মাহমুদুলের যৌথ মালিকানায় বাণিজ্যিক দোকান ও বাড়ি আছে। এসব সম্পদের ৬ ভাগের ১ অংশ তার।
হলফনামায় উল্লেখ করা প্রার্থীদের আয় ও সম্পদের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, "সিলেটের প্রধান তিন প্রার্থীই ব্যবসায়ী। বিশেষত, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী স্বপরিবারে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী। সেখানে তাদের ব্যবসা বাণিজ্যও রয়েছে। ফলে তার আয় এতো কম হওয়া বিশ্বাসযোগ্য নয়। নির্বাচন কমিশন চাইলে এখনো এসব তথ্যের সত্যতা যাছাই করে দেখতে পারে।"
হলফানামায় প্রবাসে আয়ের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা আরোপের দাবি জানিয়ে ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, "এখনকার প্রার্থীদের বিদেশেও অনেক ব্যবসা বাণিজ্য থাকে। তাছাড়া সিলেট অঞ্চলে নির্বাচনে অনেক প্রবাসীও প্রার্থী হন। কিন্তু প্রবাসে আয়ের হিসেব তারা দেন না। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনেরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে ভোটাররা তাদের ব্যাপারে প্রকৃত তথ্য জানতে পারে না।"
"আনোয়ারুজ্জামান বা মাহমুদুলের আয় যদি আসলেই এতো কম হয় তাহলে তারা নির্বাচনের এই বিপুল ব্যয় মেটাবেন কী করে?," প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, "আমি পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে থাকি। সেখানে আমার ভাইদের ব্যবসা রয়েছে। আমি নিজের সেখানের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় অংশীদার। নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় যুক্তরাজ্যে আয়ের তথ্য আমি হলফনামায় উল্লেখ করিনি। এছাড়া, আমার স্ত্রী ও সন্তানরা যুক্তরাজ্যে চাকরি করেন। তারা সবাই আমার নির্বাচনী খরচ মেটাতে সহায়তা করবেন।"
"এছাড়া প্রবাসী অনেক বন্ধুবান্ধবও অনুদান দেবেন। সবার সহায়তায় আমি নির্বাচনী ব্যয় মেটাবো। তবে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত ব্যয়ের বেশি আমি খরচ করবো না," যোগ করেন তিনি।
নির্বাচনী ব্যয়ের উৎস সম্পর্কে ইসলাম আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, "আমার কর্মীদের কোনো টাকা দিতে হয় না। তারা নিজেদের খরচেই প্রচার চালাচ্ছেন। দল থেকেও সহায়তা করা হচ্ছে। তবে বাদবাকি খরচও আমার একার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব না। আমার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের সহায়তায় আমি নির্বাচনী খরচ মেটাবো।"
এদিকে নজরুল ইসলাম বাবুলও নিজের আয় আর প্রবাসী আত্মীয়স্বজনদের সহায়তা থেকেই নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন বলে জানিয়েছেন।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবার নগরের ৪২টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন।