দক্ষিণের পর এবার ঢাকা উত্তরেও সড়কদ্বীপের গাছ কাটা হলো
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সাতমসজিদ রোডের গাছ কাটার প্রতিবাদে পরিবেশবাদীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই গাবতলীর টেকনিক্যাল মোড়ে সড়কদ্বীপের গাছ কাটলো ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বলেছে, কোথাও উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে গাছ কাটা যাবে না সেটা সকল ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এরপরেও যারা নির্দেশনা না মেনে গাছ কেটে ফেলেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ঐ স্থানে গাছ লাগিয়ে দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে টেকনিক্যাল মোড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টেকনিক্যাল মোড় থেকে কল্যাণপুরের দিকে প্রায় ১০০ মিটার সড়কদ্বীপ খুঁড়ে রাখা হয়েছে। কাজ করছে কয়েকজন কর্মচারী। এ অংশে গত ২-১ দিন আগেও দাঁড়িয়ে ছিল অন্তত ৩০টি ছোট-বড় গাছ। সড়কদ্বীপের খোঁড়া অংশে এখনও পড়ে আছে বেশ কয়কটি গাছের শিকড়।
এখানে কর্মরত একাধিক কর্মচারী টিবিএসকে বলেন, এখানে একটি বড় আকারের নিমগাছসহ বেশ কয়েকটি গাছ ছিল। সড়কদ্বীপের কাজ করতে গিয়ে দুই পাশের মাটি আলগা করার কারণে গাছগুলো হেলে পড়ছিল তাই কয়েকটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে এবং কয়েকটি শিকড়সহ তুলে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, রাস্তার ডিভাইডারে ৫-৬টি বড় আকারের গাছসহ অন্তত ৩০টির মতো গাছ ছিল। সবগুলো গাছই তুলে ফেলা হয়েছে। আগের রাতে দাঁড়িয়ে থাকা নিমগাছটিও কেটে ফেলা হয়।
রাস্তার পাশে শরবত বিক্রি করা হকার মো. তৌহিদ টিবিএসকে বলেন, 'এখানে বড় আকারের ৫-৬টি গাছ ছিল। এখন যেমন রাস্তার বাকি অংশে গাছ আছে, ফাঁকা অংশেও সেভাবে গাছ ছিল। ৫-৬ হাত পরপরই নানা ধরনের গাছ ছিল। এখন এ অংশ মরুভূমির মতো হয়ে গেছে। আগে বাতাস একটু শীতল থাকতো গাছের ছায়াতে, এখন সেটা পাচ্ছি না।'
তবে ডিভাইডারের কাজের দেখাশোনার কাজে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মজিবর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'রাস্তার এ অংশে মূলত একটিমাত্র বড় নিমগাছ ছিল। যখন গাছটি কাটা হয় তখন অনেকেই ছিল। পাশের মাটি সরানোর পরেই গাছ পড়ে যেতে নিয়েছিল, তখন গাছটি কেটে ফেলা হয়। বাকি যেসব গাছ কাটা হয়, সেগুলো মরা গাছ ছিল।'
'সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন' এর সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব টিবিএসকে বলেন, 'উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র যেখানে গাছ কাটার বিরুদ্ধে সোচ্চার সেখানে তার কর্মকর্তারাই রাস্তার গাছ কেটে উজাড় করছে যা কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়। রাস্তার উন্নয়নের নামে গাছ কাটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আর সড়কদ্বীপের গাছগুলো রেখেই উন্নয়ন কাজ করতে হবে এটাই আমাদের দাবি।'
ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাহী প্রকৌশলী (ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল) নাঈম রায়হান খান বলেন, 'টেকনিক্যাল মোড়ে আমাদের একটি ফুটওভার ব্রিজ তৈরীর কাজ চলছে। এজন্য এর আশেপাশের রাস্তার ৩০০ ফিট করে মিডিয়ানের উন্নয়ন করা হচ্ছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএম রহমান ইন্টারন্যাশনাল-কে কড়া নির্দেশনা দেওয়া আছে যেন কোনো গাছ না কাটে। আমি খোঁজ নিচ্ছি গাছ কাটার বিষয়ে।'
ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম বলেন, 'মেয়র মহোদয়ের কড়া নির্দেশনা কোথাও কোনও গাছ কাটা যাবে না। আমরা শুনেছি টেকনিক্যালের একটি বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে তাই সেখানে ৮টি বড় গাছ লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছেন মেয়র।'
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, "ঢাকা উত্তরের মেয়র বলেছেন 'কেউ গাছ কাটলে আমি তার হাত কেটে দেব'। তাই ডিভাইডার নির্মাণের সময় যে ঠিকাদার গাছ কেটে ফেলেছে তার বিরুদ্ধে উত্তর সিটিকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঠিকাদারকে শাস্তি এবং কাজ থেকে বরখাস্ত করতে হবে। নইলে মেয়র যা বলেছেন তার সঙ্গে যে, তার কাজের মিল নেই সেটিই প্রমাণিত হবে। উন্নয়নের নামে নগরীতে আর একটিও গাছ কাটা হোক, আমরা তা চাই না।"