শেরাটনের প্রাপ্য অংশ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করতে হবে: হাইকোর্ট
রাজধানীর বনানী এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের ৬০ কাঠা জায়গায় ২৮ তলা ভবন বানিয়ে পাঁচ তারকা হোটেল শেরাটন তৈরি করেছে ইউনিক গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান বোরাক রিয়েল এস্টেট। চুক্তি অনুযায়ী হোটেলের প্রাপ্য অংশ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে বুঝে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালত আগামী তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশও দেন।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
একইসাথে সিটি করপোরেশনের প্রাপ্য অংশ বুঝে নিতে বিলম্ব করার কারণ এবং হোটেলের যে অংশ অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে -- তা অপসারণ করতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
স্থানীয় সরকার সচিব, রাজউক, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদেরকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ১ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে 'সরকারি জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীতে সিটি করপোরেশনের ৬০ কাঠা জায়গায় ২৮ তলা ভবন বানিয়ে একাই ভোগদখল করছে বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড। সেখানে তৈরি করা হয়েছে পাঁচ তারকা হোটেল।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ বলছে, বোরাক রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে চুক্তি ছিল ১৪ তলা ভবন নির্মাণের। যার ৩০ শতাংশ পাবে সিটি কর্পোরেশন, বাকিটা বোরাক। সিটি কর্পোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, তাদের ভাগের সম্পদের মূল্য প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা। কিন্তু সে হিস্যা গত এক দশকেও বুঝে পায়নি সিটি করপোরেশন। উল্টো চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ১৪ তলার স্থলে ২৮ তলা ভবন নির্মাণ করে পুরোটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বোরাক।
অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময়ে বোরাক রিয়াল এস্টেটের সঙ্গে করপোরেশনের চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, বনানী কাঁচাবাজারের পশ্চিম পাশে ও বনানী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উত্তর পাশে সিটি করপোরেশনের জমিতে 'বনানী সুপার মার্কেট কাম হাউজিং কমপ্লেক্স' নির্মাণ করা হবে। ভবনের ৩০ শতাংশ পাবে সিটি করপোরেশন, ৭০ শতাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। অসম এ চুক্তি নিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়। সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়।
সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর বনানীর এই সম্পত্তি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভাগে পড়েছে। উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বনানীর মতো এলাকায় করপোরেশনের জমিতে ভবন নির্মাণে যে অসম চুক্তি হয়েছে, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তখন কিছু সুবিধাভোগী চক্র এই অসম চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটির সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বনানীর ৪৪ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে করপোরেশনের ৬০ কাঠা জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ কাঠা জমিতে আগেই করপোরেশনের তিন তলা মার্কেট ছিল। মার্কেটের সামনে প্রধান সড়ক লাগোয়া প্রায় ১৬ কাঠা খালি জমি ছিল। দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল কেবল ৪৪ কাঠা জমিতে ভবন নির্মাণের জন্য। সামনের ১৬ কাঠা থাকবে খোলা জায়গা। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে পরে সামনের খালি ১৬ কাঠা জমিও প্রকল্পে যুক্ত করে ৬০ কাঠা জমিতে ১৪ তলা ভবন নির্মাণের চুক্তি করা হয়।
কিন্তু, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোরাক সামনের ১৬ কাঠা খালি জমিতে ২৮ তলা ভবন নির্মাণ করে। চুক্তি ভঙ্গ করে ২৮ তলা ভবন না করতে বোরাককে চিঠি দিয়ে কাজ করতে বারণ করে সিটি করপোরেশন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, করপোরেশন কেবল চিঠি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে। কাজ বন্ধের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
গত রোববার (১১ জুন) ২৮ তলা ভবন বানিয়ে পাঁচ তারকা হোটেল শেরাটন তৈরির ঘটনা তদন্ত চেয়ে রিট করা হয়। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এ রিট করেন।
এর আগে গত ৪ জুন সরকারি জমিতে ৫ তারকা শেরাটন হোটেলের অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগপত্র জমা দেন ব্যারিস্টার সুমন।