বগুড়ায় ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় সাংবাদিককে মারধর
মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় বগুড়ায় জোজিফ হোসেন প্রতীক নামে এক সাংবাদিককে মারধর করেছে সন্ত্রাসীরা। গুরুতর আহত হয়ে প্রতীক বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
৩১ বছরের প্রতীক ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের বগুড়া ব্যুরো অফিসে প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত এবং বগুড়া জেলা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক প্রতীকের স্ত্রী পশ্চিম ঠনঠনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আছেন। আজ দুপুর দেড়টার দিকে স্ত্রীকে দেখে বাসায় ফেরার পথে তিনি দেখেন এক ব্যক্তিকে কয়েকজন মিলে মারধর করছে। একইসঙ্গে ওই ব্যক্তির মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল সন্ত্রাসীরা। এর প্রতিবাদ করেন প্রতীক। তখনই তার ওপর চড়াও হয় ছিনতাইকারীরা।
ওই সময় প্রতীককে অন্তত সাতজন মিলে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। হামলা শুরু করলে মোবাইল বের করে সহকর্মী ও পুলিশকে খবর দেন ওই সাংবাদিক। এ কারণে তার হাত থেকে মোবাইল, চাবিসহ মোটরসাইকেল কেড়ে নেয় তারা। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজন মোটরসাইকেল ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে চলে যায়। পরে ঘটনাস্থলে হৈচৈ শুনে লোকজন জড়ো হয়। তাদের উপস্থিতিতে মোবাইল ও চাবি দিয়ে সটকে পড়ে সন্ত্রাসীরা।
সাংবাদিক জোজিফ হোসেন প্রতীক বলেন, 'ক্লিনিক থেকে ফেরার সময় দেখতে পাই রাস্তার ওপর একজনকে মারধর করছে ঐ এলাকার দুই-তিনজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এই সময় তারা লোকটির মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল। কেন মারছে– জিগ্যেস করতেই তারা বলে উঠে, তুই কে? আমি পরিচয় দেওয়ার পরপরই তারা আমাকেও মারতে শুরু করে। প্রথমে সুমন, তার ভাই কাদের এবং শামীম নামের তিনজন। পরে আরও ৪ থেকে ৫ জন আমার মাথার হেলমেট কেড়ে নিয়ে মাথায় এবং বুকে মারধর করে। এ সময় তারা আমার মোবাইল ফোন এবং মোটরসাইকেল কেড়ে নেয়। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের কাছে খোঁজ নিলে জানা গেছে, সুমন, কাদের ও শামীমদের কর্মকাণ্ডে ওই এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। এই সন্ত্রাসী দলটি দীর্ঘদিন ধরে আইনের চোখে ধুলো দিয়ে ঠনঠনিয়া, খান্দার এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ায়। ছিনতাই, খুনের সঙ্গেও তারা জড়িত। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালীদের প্রশ্রয়ে থাকার কারণে তারা অপরাধ করতে ভয় করে না। ফলে এলাকাবাসীও কাউকে কিছু বলতে সাহস পায় না।
ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চল প্রধান ও বগুড়া জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসিবুর রহমান বিলু বলেন, 'তারা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এটা এলাকাবাসী জানেন, কিন্তু ভয়ে মুখ খুলেন না। এই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানাচ্ছি'।
হামলার খবর পেয়ে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি বলেন, 'খবর পাওয়ার পরপরই আমাদের তিনটি টিম ঘটনাস্থলে আসে এবং আহত সাংবাদিককে উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।'