ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘হেলথ ইমার্জেন্সি’ হয়নি বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ভিন্নমত চিকিৎসকদের
সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে, প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। জানুয়ারি থেকে চলতি বছরে এপর্যন্ত মারা গেছেন ১০৬ জন, আর ২১ হাজার রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। তারপরও এই পরিস্থিতি জনসংখ্যা জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
রোববার (১৬ জুলাই) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এর মহাপরিচালক ডা. খুরশীদ আলম এমন কথাই বলেন।
যার সাথে অবশ্য একমত হতে পারেনি বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
ডা. খুরশীদ আলম বলেছেন, 'সংক্রমণ বাড়তে থাকলে আমরা সংকটে পড়ে যাবো। তবে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত আমাদের কোনো সংকট নেই। পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণা করার মতো পরিস্থিতি আমরা দেখছি না। যখন করোনা ছিল, তখন এটা করা হয়েছিল'।
'জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণার যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটা নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আলোচনা করতে হবে। আমরা আমাদের উদ্বেগ পলিসি লেভেলে জানিয়েছি'- যোগ করেন তিনি।
কিন্তু, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা পর্যায়ে বলে মনে করে বিএমএ।
রোববার সন্ধ্যায় মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ-বিষয়ক এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিএমএ নেতারা পরিস্থিতির এমন মূল্যায়ন করেন।
সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। নিজ প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় দেওয়া বক্তব্যে বিএমএ'র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইডিসিআর) এর উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন বলেন, 'অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ঘনবসতি, গ্রাম ও শহরে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে খারাপ করেছে। ডেঙ্গুর চারটি ধরনেই মানুষ এখন আক্রান্ত হচ্ছে, এখন জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি চলছে, যা জাতীয় উদ্বেগের কারণ'।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডা. খুরশীদ আলম বলেছিলেন, "ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য শয্যা সংখ্যা ৫০০টি। কিন্তু, সেখানে রোগী ভর্তি আছেন ৬০০ জনের মতো।
"মুগদার আশপাশের জোনগুলো- যেমন শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ, কদমতলি, বাসাবো ও রামপুরা পর্যন্ত পুরো এলাকাতেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। এসব রোগীর বেশিরভাগই মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা চেষ্টা করেছিলাম সেখান থেকে কিছু রোগী অন্যত্র সরিয়ে নিতে। কিন্তু, রোগীরা রাজি হননি। তারা তাদের বাসাবাড়ির কাছাকাছি থেকেই চিকিৎসা নিতে চান"- আরও বলেন তিনি।
ডা. খুরশীদ আলম জানান, আমাদের অন্য হাসপাতালগুলোতে শয্যা খালি ছিল, কিন্তু সেগুলো ধীরে ধীরে ভরে যাচ্ছে। দেশে উদ্বেগজনক হারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে।
''এবার বর্ষা দেরিতে শুরু হয়েছে, তাই ডেঙ্গু মৌসুম লম্বা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোয় জনবল সংকট নিরসনে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। রাজধানীর সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে" - বলছিলেন তিনি।
এদিকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ডা. মো আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, বেসরকারি হাসপাতালগুলো যাতে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় অতিরিক্ত অর্থ না নেয়, সেজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি টিম পাঠিয়ে মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রাইভেট হাসপাতালগুলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর তথ্য না দিলে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন তিনি।
এই প্রেক্ষাপটে, ডা. এম মুশতাক হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি তখন বলে, যখন রোগীর চাপে হাসপাতালে জায়গা হয় না। তার আগে যদি আমরা প্রস্তুতি নেই, তাহলে তো পরিস্থিতি তেমন হবে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও- জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার মতই উদ্যোগ নিয়েছে। ২৪ ঘন্টা কন্ট্রোল রুম চালু করেছে, সব হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার চালু করেছে। এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনকে মশক নিধনে আরো তৎপর হতে হবে।"
সেমিনারে দ্বিতীয় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খ্যাতিমান রিউমাটোলজিস্ট ও বিএমএর মেডিকেল জার্নালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের উচিত ডেঙ্গুর প্রটোকল অনুসরণ করে চিকিৎসা দেওয়া।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএমএর সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, সিনিয়র চিকিৎসকদের ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আরও সময় দিতে হবে। পাশাপাশি সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ডেঙ্গুর ব্যাপারে আরও সক্রিয় ও সোচ্চার হতে হবে।