সৌদির শ্রমবাজারে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা, দক্ষ কর্মী পাঠাতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো
সৌদিতে দক্ষ কর্মী পাঠাতে দেশের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (রিক্রুটিং এজেন্সিস) পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মূলত সৌদির শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণের সুযোগটি কাজে লাগাতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
অফিসিয়াল তথ্যমতে, ২০২২ সাল থেকে সৌদি আরবে পূর্বের তুলনায় আরও বিপুল সংখ্যক কর্মী পাঠানো হচ্ছে। শুধু ২০২৩ সালের প্রথমার্ধেই ২ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী সৌদি আরবে গিয়েছেন।
এরই অংশ হিসেবে চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব যৌথভাবে একটি 'স্কিল ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম' চালু করেছে। এই প্রোগ্রামের অধীনে বাংলাদেশে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের পর দক্ষ কর্মীদের সৌদি আরবে পাঠানো হবে।
এ সম্পর্কে 'বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস' এর জেনারেল সেক্রেটারি শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, "চলতি বছরের শুরুতে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষ জনবল চেয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সারা দেশে ১৫০ টিরও বেশি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।"
শামীম আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, "দক্ষ কর্মী তৈরির প্রক্রিয়াটি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর জন্য আরও বেশি পরিমাণে অবকাঠামো তৈরি করা ও প্রশিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন৷ তাই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন।"
শামীম আহমেদ চৌধুরী মনে করেন, দক্ষ কর্মী তৈরিতে পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। তবেই এ প্রক্রিয়ায় গতি আসবে এবং সৌদির শ্রমবাজারের সুযোগগুলো কাজে লাগানো যাবে।"
শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, "সৌদি আরবের শ্রমবাজার বাংলাদেশের কর্মীদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। কেননা আমরা প্রায় ৪৫ বছর ধরে দেশটিতে কর্মী পাঠাচ্ছি। এতে করে সৌদিতে আমাদের কর্মীদের ভালো ব্র্যান্ডিং তৈরি করেছে। তাই বিদেশ গমনে ইচ্ছুক কর্মীদের নিজেদের প্রস্তুত করা উচিত এবং বেশি অর্থ উপার্জনের সাথে জড়িত কাজের প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত।"
চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। এ অর্থবছরে দেশটি থেকে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
'স্কিল ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম' এ অংশ নেওয়া এমনি একজন কুমিল্লার আব্দুল মোতালেব। নিজের আত্মীয়দের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনিও সৌদিতে কর্মী হিসেবে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেব জানান, সৌদিতে থাকা আত্মীয়রা তাকে ভালো চাকরির পাওয়ার জন্য দেশ থেকে কিছু কাজ শিখে যেতে বলেছেন। এই পরামর্শ অনুযায়ী তিনি স্কিল ভেরিফিকেশন প্রোগ্রামের অধীনে বেশ কয়েকটি কোর্সে ভর্তি হয়েছেন।
আব্দুল মোতালেব বলেন, "আমি একটি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছি এবং ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শিখছি। কেননা নতুন নতুন শহর নির্মাণের জন্য সৌদির আরবের প্রচুর দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন। আগামী তিন মাসের মধ্যে আমি সার্টিফিকেট লাভ করবো।"
অন্যদিকে বিদেশ গিয়ে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাওয়া আরেক তরুণ নাজমুল আহসান। প্রবাসী কর্মী হিসেবে বিদেশ গমনে তার প্রথম পছন্দ সৌদি আরব।
নাজমুল আহসান বলেন, "আমার গ্রামের বাড়িতে কাজের ভালো কোনো সুযোগ নেই। তাই একজন প্রবাসী কর্মী হিসেবে চাকরির খোঁজ করা আমার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। আমি সর্বপ্রথম সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। কেননা একজন মুসলমান হিসেবে সৌদি আরব আমার কাছে পবিত্র জায়গা।"
আহসান জানান, তিনি ঢাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করেছেন। সেই এজেন্সির পক্ষ থেকে তার জন্য সৌদি আরবে রাজমিস্ত্রির কাজের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে সৌদির ভিসা পেয়ে যাবেন বলেন তিনি আশা প্রকাশ করছেন।