'এসব প্রচার করা বন্ধ করেন': বিদেশি মিশনগুলোর যৌথ বিবৃতি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিদেশি মিশনগুলোর যৌথ বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গণমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন এ ধরনের বক্তব্যের প্রচার বন্ধ করার সময় এসেছে।
বুধবার (১৯ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "প্রতিদিন বিভিন্ন দেশে লোক মারা যায়, তখন তারা কেন স্টেটমেন্ট দেয় না! বাংলাদেশ বলেই একটা মগের মুল্লুক পেয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।"
যুক্তরাষ্ট্রের কেমব্রিজে পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ সৈয়দ আরিফ ফয়সালের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "কেমব্রিজে বাংলাদেশের একটা ছেলে মারা গেল, ফয়সাল…তারা কি বলেছে? জাতিসংঘ কোনোদিন বলেছে, তদন্ত কতদূর হলো? কিংবা রাষ্ট্রদূতরা দলবেঁধে কোন বিবৃতি দিয়েছে? তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন।"
"আপনারা কেন জিজ্ঞেস করেন না? প্রতিদিন বিভিন্ন দেশে লোক মারা যায়, তখন তারা কেন স্টেটমেন্ট দেয় না...আর বাংলাদেশ হলেই একটা মগের মুল্লুক পেয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।"
হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "তদন্ত করে দেখতে হবে কে মারিয়েছে। এটাতে কারা জড়িত ছিল আমরা জানিনা। হয়তো আমাদের নির্বাচনে অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য কেউ এটি করিয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "হয়তো কেউ আমাদের আগামী নির্বাচন চায় না। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য এ ধরনের অপকর্ম শুরু করেছে।"
গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে মোমেন বলেন, "আপনারা তাদের জিজ্ঞেস করেন না কেন। আপনাদের সঙ্গে তাদের যখন-তখন সাক্ষাৎ হয়। আপনারা তাদের দেশের কথা জিজ্ঞেস করেন না কেন। লন্ডনে মেরে ফেলেছে আমাদের বাঙালি ছেলেদের, আর আমেরিকায় তো যখন-তখন লোক মারা যায়। কখনো হেনস্তা করে…এগুলো নিয়ে প্রশ্ন করেছেন কখনো? ফয়সালের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছেন? কেন করেননি?"
"আপনাদেরও এসব বিষয়ে সজাগ হওয়া উচিত। খালি আমার দেশ হলে হইচই করা শুরু করে দেয়। আর কোথাও হইচই করে এরকম?"
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, "আমাকে একটা তদন্ত প্রতিবেদন দেন আর কোথায় তারা এ রকম স্টেটমেন্ট দিয়েছে…কিছু দিন আগে ফ্রান্সে কতগুলো লোক আক্রান্ত হলো, কেউ কি দলবেঁধে স্টেটমেন্ট দিয়েছে? তাহলে কেন শুধু বাংলাদেশ হলেই দেয়। এখন সময় হয়েছে যে, আপনারা এসব প্রচার করা বন্ধ করেন। তারা আমাদের কাছে স্টেটমেন্ট না দিয়ে আপনাদের কাছে দেয়। আর এটা গ্রহণযোগ্য নয়।"
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা এবং পূর্ণ তদন্ত ও জড়িতদের জবাবদিহিতার দাবি জানিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।
"আমরা ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী আশরাফুল আলমের- যিনি হিরো আলম নামে পরিচিত- ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা পূর্ণ তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহিতার দাবি জানাই", এক যৌথ বিবৃতিতে জানায় কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাস ও হাইকমিশন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই।"
এর আগে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।