২৭ জুলাই: আল্টিমেটাম দিতে পারে বিরোধীরা, সতর্ক অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন দল
২৭ জুলাই রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের ঘোষণা আসতে পারে।
এ সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া না গেলে আগামী ৩০ জুলাই,থেকে ঢাকায় টানা কর্মসূচিতে যেতে পারে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা। এ কর্মসূচির মধ্যে থাকবে বিক্ষোভ, সমাবেশ, অবস্থান।
তবে আশানুরূপ নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে পারলে ও আন্দোলন তুঙ্গে উঠে গেলে সচিবালয়, ইসি ভবন ও প্রধানমন্ত্রী ভবন ঘোরাও এর পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। সরকারের আচরণসহ সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় মহাসমাবেশের আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে বিএনপির এসব কর্মসূচির বিপরীতে রাজপথ দখলে রাখতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীদের সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের হাই কমান্ড থেকে।
একই দিন আওয়ামী লীগের সহযোগী তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শান্তি সমাবেশ রয়েছে।
দু্ই মেরুর রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি ২৮ তারিখ রাজধানীতে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই এ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি ও তার শরীকদলগুলোর আন্দোলনের বিপরীতে প্রস্তুত থাকার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের সুত্র জানায়, ২৭ জুলাই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের যে শান্তি সমাবেশ রয়েছে, সেখান থেকে আরো কর্মসূচী ঘোষণা আসতে পারে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথে বৈঠকে অংশ নেওয়া ঢাকা মহানগর উত্তত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি টিবিএসকে বলেন, "বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আওয়ামী লীগও লাগাতার কর্মসূচী দেবে। বিএনপি বা তাদের শরীকদলের কর্মসূচী চলাকালে আওয়ামী লীগের এসব কর্মসূচী চলবে। তবে যাতে করে কোনোরকম সংঘাত তৈরি না হয় সেজন্য আমাদেরকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।"
এদিকে আওয়ামী লগের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের একাধিক নেতা টিবিএসকে জানান, আওয়ামী লীগের ও বিরোধী দলের কর্মসূচী চলাকালে কোনোরকম সংঘাতময় পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
এই নেতারা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ও তাদের অন্য শরীক দলগুলো পরিকল্পনা করেই সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করবে। সে ক্ষেত্রে পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে সরকারের উচ্চ মহল থেকে।
সরকার পতনের দাবীতে যুগপৎ আন্দোলন মিত্র জোট গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক টিবিএসকে বলেন, "মহাসমাবেশের দিনটি বৃহস্পতিবার হওয়ায় দাবি মেনে নিতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার সময় দেওয়া হবে। এ সময়ের মধে দাবি না মানলে রোববার থেকে অল আউট কর্মসূচিতে যাবো আমরা। লাগাতার ধারাবাহিক কর্মসূচি আসছে।"
তিনি আরও বলেন, "২৭ তারিখ সরকারের আচরণ বুঝে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পরিস্থিতি তৈরি হলে খুবই দ্রুতই সচিবালয়সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও হতে পারে। আমাদের লক্ষ্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ সরকারের পতন।"
আগামীকালের রাজনৈতিক সমাবেশ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, সড়ক অবরোধ না করা এবং জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি না করার জন্য সব দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
ডিএমপির অপারেশন বিভাগের আরেক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, তারা ইতোমধ্যেই পুলিশ স্টেশন ও এর ইউনিটগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
"যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হবে। যদি কোনো নৈরাজ্য দেখা দেয় তাহলে পুলিশ কঠোর অবস্থান নেবে," অফিসার জানান।
সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বজায় রাখলে যেকোনো কার্যক্রম করতে দেওয়া হবে।
"রাজনৈতিক দলগুলোকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে এবং যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটাতে বলা হয়েছে," যোগ করেন মন্ত্রী।