রাজধানীতে সমাবেশ ঘিরে উৎকণ্ঠা-আশঙ্কার দিন আজ
রাজধানীতে এক কিলোমিটার দূরত্বে আজ (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এছাড়া জামায়তে ইসলামীও শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে একই দিন। প্রত্যেকের লক্ষ্য- বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর সমাগম ঘটানো।
২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি সামনে রেখে তিন দলই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। একই দিনে কাছাকাছি দূরত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে বাড়তি উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ২৫টি শর্তে তাদের পছন্দের স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। তবে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগ আজ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে এবং বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে।
জামায়াতও শাপলা চত্বরে সমাবেশের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তিনটি দলই সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে; ততই সরকার পতনের এক দফা দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে মাঠ গরমের চেষ্টা করছে বিএনপি। অন্যদিকে সমান তালে মাঠে থেকে বিরোধীদের অপরাজনীতির জবাব দিয়ে ভোটের পথে হাঁটছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের লক্ষ্য হলো, বিপুল সমর্থক সমাগমের মাধ্যমে আধিপত্য ধরে রাখা। অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি অনড় রেখে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে তাদের আন্দোলনকে জোরদার করতে চায় বিএনপি।
আর জামায়াত অনুমতি না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
শুক্রবার বিএনপি ও আওয়ামী লগের পৃথক সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়েছে, ২৮ অক্টোবর ঘিরে কোনো আশঙ্কা নেই।
এরপরও সমাবেশের এই এলাকায় ব্যবসায়ীরা দোকান ও মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সুত্র জানিয়েছে। এছাড়া শুক্রবার বিকেল থেকে এসব এলাকায় সাধারণ মানুষের আনাগোনা কম ছিল বলে সরেজমিনে দেখা গেছে।
দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ গত কয়েক মাসে হয়েছে অনেকগুলোই। এক কিলোমিটারের মধ্যে দুই পক্ষই শান্তিপূর্ণ জমায়েত করার পর প্রশংসা করেছেন বিদেশিরাও। সরকারের পক্ষ থেকেও সহনশীল রাজনীতির উদাহরণ টানা হয়েছে। তবে ২৮ অক্টোবরকে ঘিরে উদ্বেগের কারণ ১৭ বছর আগের এই দিনটির স্মৃতি।
২০০৬ সালের এই দিনটিতেও ঢাকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সমাবেশ ছিল পাশাপাশি এলাকায়, সেদিন পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল না। সংঘাত সহিংসতার এক পর্যায়ে জারি হয় জরুরি অবস্থা। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষের ফলে সারাদেশে মোট ২৩ জন নিহত হয়।
বিএনপি ও জামায়াতের পরিকল্পনা
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের জন্য রাজধানী কে ১৬টি ভাগে ভাগ করেছে বিএনপি। শনিবার ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরা ঢাকার ১৬ টি স্থানে থেকে মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে যাবে।
প্রথমে ঢাকার বাহিরের জেলার নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে যাবেন, সবাই সমাবেশে যোগ দেওয়া শেষ হলে সর্বশেষ ১৬ স্থান থেকে ঢাকার নেতারা সমাবেশে যোগ দিবেন।
বিএনপি সূত্র জানায, কোথাও আওয়ামী লীগ-পুলিশ হামলা করলে পাল্টা হামলা করার জন্যও নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,
ইতোমত্যে দলটি ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটাতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে।
জামায়াতের ইসলামি সূত্রেও জানা গেছে, ৮-১০ থেকে লাখ লোকের সমাবেশ ঘটাতে চায় দলটি। ইতোমধ্যে ৩-৪ লাখ নেতাকর্মী ঢাকায় অবস্থান করছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে বেশি সংখ্যাক নেতাকর্মী ঢাকায় আসবেন।
সরকার অনুমতি না দিলেও যেকোন মূল্যে সমাবেশে বদ্ধপরিকর জামায়াত। পুলিশ বাধা দিলেও পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি।
সতর্ক অবস্থানে আওয়ামী লীগ
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনে সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থানে থাকবে তারা।
এর বাইরে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হবে সতর্ক পাহারা। প্রতিটি পাড়া-মহল্লার মোড়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কে শামিয়ানা টানিয়ে সকাল থেকে অবস্থান করবেন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর সঙ্গে দলীয় সংসদ-সদস্য ও কাউন্সিলরাও তাদের অনুসারীদের নিয়ে মাঠে অবস্থান নেবেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকা শহর থাকবে 'জয় বাংলা' স্লোগানের দখলে।
"সমাবেশে ১০ লাখ লোকের সমাগমের মাধ্যমে বিএনপির কবর রচনা করা হবে। রাজধানী ঢাকায় সারা বাংলাদেশ থেকে যে সন্ত্রাসীদের ঢুকিয়েছে বিএনপি, ঢাকাবাসীর শান্তির শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ওই সব সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করা হবে," বলেন তিনি।
আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ
বিএনপির সমাবেশে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং বিএনপির সমাবেশে কোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি না করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, "বিএনপি আন্দোলন করতে পারে, এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু আন্দোলনের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।"