শনিবার ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি
শনিবার (২৯ জুলাই) ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
রাজধানীর নয়াপল্টনে আজকের জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামীকাল সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করেন।
যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের পাশাপাশি সমমনা বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ১২ দলীয় জোটও একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
সমাবেশে ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার এক দফা আন্দোলনে যোগ দেওয়া সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি।
তিনি বলেন, 'সরকার দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করেছে।
'দেশের প্রতিটি খাত আজ ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে মানুষের কোনো অধিকার নেই। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আজকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য আমরা ৩৬ দল একসঙ্গে আন্দোলন করছি। অন্য যারা আন্দোলনে যোগ দেয়নি, তারাও বলছে এদের (আওয়ামী লীগ) অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।
'আমরা আন্দোলনের শরিক সকল দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব।'
ফখরুল বলেন, 'এ সরকার বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে আবারও যেনতেন নির্বাচন করতে চায়। সরকারের অপকর্মের জন্য র্যাবসহ অনেকের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে, যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।'
তিনি আটককৃত নেতাদের মুক্তি দাবি করে বলেন, 'পুলিশ প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা অবৈধ সরকারের বেআইনি আদেশে কাজ করবেন না। আইনের শাসন মেনে চলুন। অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না।'
এদিকে শুক্রবারের সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সমাবেশে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদেরকে ঢাকা ছেড়ে না যাওয়ার আহ্বান করেছেন।
'সরকারের আর সময় নাই। চলুন, হয় মরব, না হয় মারব — আর অপেক্ষার সময় নাই,' সমাবেশস্থলে বলেন গয়েশ্বর।
সরকারকে কঠোর বার্তা দিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ভারত-চায়না থেকে আর্থিক সহায়তা আসতে পারে, কিন্তু ভোটের মালিক জনগণই নির্বাচনে তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের সর্বশেষ চিঠির কথা উল্লেখ করে নয়াপল্টনের সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেন, বর্তমান সরকারের সময় এবং রাস্তা দুটোই ফুরিয়ে গেছে।
সমাবেশে বক্তৃতাকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে না রাখতে বলেছেন ১৪ জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান।
তিনি বলেন, কংগ্রেসম্যানরা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন জাতিসংঘের অধীনে করার জন্য বলেছেন।
'আজ শুধু দেশে নয়, সারাবিশ্বই শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছে। শেষ হাসিনা হামলা-মামলা করেও আর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই,' বলেন রিজভী।
এই সরকারকে আর কোনো ছাড় নয় মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, 'এই সরকারের সময় শেষ, অচিরেই সরকারকে আমরা বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেব।'
সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, শেখ হাসিনার জন্য সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
'এখন রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা চাওয়া,' তিনি বলেন।
বিএনপির মহাসমাবেশের এলাকায় অনেক মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংযোগ সমস্যায় পড়েছেন। দুপুর থেকে সেখানে মোবাইলে ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'যারা ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছেন, তারা ভোট চোর সরকারের দালাল। তাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনা আর নাই, শেখ হাসিনার তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে পালানো ছাড়া আর কোনো পথ নাই, শেখ আর ক্ষমতায় নাই।'
এ সময় তিনি শেখ হাসিনাকে গণভবন ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'যত দ্রুত সম্ভব গণভবন ত্যাগ করুন, গণভবন ত্যাগ করুন।'
খসরু বলেন, 'মার্কিন কংগ্রেসমান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। বিদেশেও শেখ হাসিনার উপর সমর্থন নাই।'
শৃঙ্খলা রক্ষায় অন্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করব: বিজিবি পরিচালক
এদিকে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণার পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, এটি আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।
বিজিবি পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদ পারভেজ বলেন, 'আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচির কথা শুনেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা কাজ করব। তবে আমরা এখনও সম্পূর্ণ সিদ্ধান্তে আসিনি।'
তিনি আরও বলেন, 'সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা বজায় রাখতে আমরা কাজ করব।'
বিজিবির আনুমানিক কত প্লাটুন মোতায়েন থাকতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।