গাবতলীতে সংঘর্ষ: দূরপাল্লার অনেক ট্রিপ বাতিল, শহরে গণপরিবহন সংকটে দুর্ভোগ
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপি, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে অনেকটা থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে রাজধানীর গাবতলী এলাকায়।
সকালে গাবতলী টার্মিনাল থেকে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন রুটের দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে গেলেও, বেলা ১১ টা থেকে দুপুর প্রায় ১টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে গাবতলী এলাকা।
এসময় শহরের ভেতরে গণপরিবহন সংকট ও সার্বিক পরিস্থিতির কারণে তৈরি হওয়া যাত্রী সংকটে বেশ কিছু দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন তাদের নির্ধারিত ট্রিপ বাতিল করে। এছাড়াও সংঘর্ষ শুরুর পর বেশ কিছু কাউন্টার বন্ধ করে দিতে দেখা যায়।
নাবিল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার অভি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে জানান, সকালে কিছু গাড়ি ছেড়ে গেলেও যাত্রীর চাপ কম থাকায় এখন বেশ কিছু ট্রিপ বাতিল করা হয়।
অভি বলেন, আমরা টিকিট বিক্রি করছি, পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া গেলে পরবর্তী গাড়িগুলো ছেড়ে যাবে, যাত্রী না হলে ট্রিপ বাতিল হবে।
আলহামরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার রানা টিবিএস'কে বলেন, সকাল ১১টা পর্যন্ত আমাদের সব গাড়ি চলাচল করেছে, ১১ টা থেকে ৩টা পর্যন্ত গাড়ি বন্ধ ছিলো, এখন আবার ছাড়ছি।
'একদিকে সংঘর্ষ, অপরদিকে যাত্রী সংকট, সব মিলিয়ে ওই ৪ ঘন্টা গাড়ি বন্ধ ছিলো, তিনি জানান।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার রঞ্জু বলেন, গাড়ি আছে, কিন্তু যাত্রী খুবই কম।
সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আসিফ জানান, সকাল থেকে তাদের নির্ধারিত সব গাড়ি ছেড়ে গেলেও যাত্রী সংখ্যা কম ছিলো। এছাড়াও সংঘর্ষের সময় যানজট থাকায় কিছু গাড়ি দেরিতে ছেড়ে গেছে।
রোজিনা এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজার সোহেল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, আমাদের সব গাড়ি রাতে চলাচল করে। যার কারনে এখনো তেমন কোন সমস্যা হয়নি, তবে যাত্রীর চাপ খুবই কম। বিকালের পর যাত্রীর চাপ বাড়ার আশা করছি।
বেলা ২ টার দিকে চট্টগ্রাম রুটের শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস এর কাউন্টার মাস্টার মো. জনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, ঢাকার বাহিরে কোথাও ঝামেলা নেই, সমস্যা ঢাকার ভিতরে। লোকাল বাস চলছে না, যার কারণে সংঘর্ষ শুরুর পর থেকেই গাবতলী থেকে টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছি।
'সকালে মোটামুটি যাত্রীর চাপ ছিলো, ১০ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি করেছি। বেলা ১০/১১ টার পর যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম', তিনি যোগ করেন।
এদিকে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও কয়েক জায়গায় গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় রাজধানীতে গণপরিবহন সংখ্যাও ছিল কম। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক যাত্রী। এসময় বাস না পেয়ে অনেক যাত্রীকে বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌছানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।
দুপুরে ১ ঘন্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করেও বাস পাননি মো. হান্নান। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, সাভার থেকে একটি বাসে আমিনবাজার এসে সেখান থেকে গাবতলীতে এসেছি। এখন উত্তরাতে যাওয়ার জন্য কোন বাস পাচ্ছি না। সিএনজি ড্রাইভাররা অনেক বেশি ভাড়া দাবি করছে।
দিনাজপুর থেকে বাসে পরিবার নিয়ে গাবতলি পৌছানোর পর, নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার লোকাল বাস না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মিন্টু নামে এক ব্যক্তি টিবিএসকে বলেন, দিনাজপুর থেকে আসতে কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু গাবতলী এসে আর বাস পাচ্ছি না। এখন স্ত্রী-বাচ্চা নিয়ে কীভাবে নারায়ণগঞ্জ যাবো সেটিই ভাবছি।
সবুজ নামে একজন উবার বাইক রাইডার জানান, পুরো শহরের ভিতরে ফাঁকা, গাবতলী যাও গাড়ি দেখা যায়, শহরের ভিতরে নাই। যার কারনে মোটরসাইকেলের যাত্রীর চাপ বেড়েছে।
গাবতলীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই এলাকায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও ছিল বেশ কম। তবে দুপুর ৩ টার পর থেকে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে দেখা যায়।