গ্রেপ্তার হওয়া বুয়েট শিক্ষার্থীরা কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত না, ফাঁসানো হয়েছে: দাবি অভিভাবকদের
হাওরে ঘুরতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, তারা কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত নন, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে তাদের ফাঁসানো হয়েছে।
নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্রুত জামিন ও মামলা থেকে মুক্তি দিতে বিচারবিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে গ্রেপ্তার হওয়ার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান।
অভিভাবকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আলী আহসান জোনায়েদ, তার ভাই বুয়েটের মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী আলী আম্মার গ্রেপ্তার হয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে জোনায়েদ জানান, "সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যাওয়া বুয়েটের ২৪ জন শিক্ষার্থীসহ মোট ৩৪ জনকে আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে। অন্যায়ভাবে আটক করা ও সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে, এই ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।"
ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি জানান, "টার্ম-ব্রেকের ছুটির মাঝে শনিবার বন্ধুরা মিলে হাওরে ঘুরতে গিয়েছিলেন, সেখানে কয়েকজন বুয়েটিয়ানকে পেয়ে একত্রে ঘুরতে যায়। রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না।
রাত ১০টার দিয়ে তারা তাদের নিজের ও গার্ডিয়ানের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর জানতে চায়। তারা জানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাহিরপুর থানার পুলিশ আটক করেছে। সংশ্লিষ্ট সবার সাথে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।"
'সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয়ে গণমাধ্যমে বরাতে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে জানতে পারি' জানিয়ে জোনায়েদ বলেন, "তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে। এ রকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক।"
মামলার বিবরণীর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটিয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের ক্ষতিসাধন, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড সহ ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধ ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।"
বুয়েট কর্তৃপক্ষকে অভিভাবকরা বিষয়টি অবগত করলে সোমবার বিকালে বিষয়টি জেনেছেন বলে জানায় বুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিচালক।
জোনায়েদ বলেন, "এ রকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা, কোন উদ্দেশ্যে করছে, সে বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন এবং সন্তানদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ার হুমকির সম্মুখীন। বিষয়টা ছাত্রকল্যাণ পরিচালকদের অবহিত করি এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধও জানাই।"
তিনি জানান, "এভাবে হাওরে ঘুরতে গিয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে, এমন অভিযোগ হাস্যকর। তাদের কাছে ও সাথে থাকা মোবাইলে মামলার জব্দ তালিকায় উল্লেখিত উক্ত মামলা সাজাতে পুলিশের যেসব কাগজপত্র প্রত্যাশিত, সেসবের কিছু না পেয়ে তাদের সামনেই জব্দকৃত সেসব অনাকাঙ্খিত মালামাল সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করা হয়েছে তাদের মামলা সাজানোর জন্য।"
তিনি বলেন, "আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সাথে আমাদের সন্তানরা জড়িত না। ছোটবেলা থেকে পড়ালেখার প্রতি তাদের ঝোঁক ছিল, রাজনীতিসহ এ জাতীয় কোনো কাজের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না কখনোই।"
সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে রোববার সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২৪ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৪ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলা বাজারের নৌকাঘাট থেকে রবিবার সকাল ৭টায় একটি নৌকায় করে ৩৪ শিক্ষার্থী টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যান। হাওরে ঘোরার পর দুপুরের দিকে পাটলাই নদী দিয়ে ট্যাকেরঘাট পর্যটন এলাকায় যাওয়ার পথে নতুনবাজারের সামনে নৌকাটি আসলে পুলিশের দুটি স্পিডবোট তাদের গতিরোধ করে। এসময় নৌকার চালক আহাদুল মিয়া, মুহাদ্দিস মিয়াসহ ৩৪ শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।