মানহানির মামলায় কারাদণ্ড নয়, জরিমানা হবে: আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এখন থেকে মানহানির মামলায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। কারণ এ ধরনের মামলায় কারাদণ্ডের বিধান তুলে নেওয়া হয়েছে। যে মামলায় কারাদণ্ড নেই, সেখানে গ্রেপ্তার করার কোন কারণও নেই।
বহুল আলোচিত 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮' (ডিএসএ) পরিবর্তন করে 'সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩' প্রণয়ন বিষয়ে অবহিত করতে গিয়ে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
আজ তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট উপস্থাপন করেছেন। মন্ত্রিসভা এ আইনের খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে।
মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী সচিবালয়ে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। আনিসুল হক বলেন, এখন আইনটি ভেটিং এর জন্য আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ডিভিশনে পাঠানো হবে। এখান থেকে ভেটিং হয়ে যাওয়ার পরে আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আইনটি পাস করার জন্য উপস্থাপন করা হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মানহানিকর সংবাদ প্রকাশে কারাদণ্ডের বিধান ছিল। এখন সেই বিধান বাতিল করা হয়েছে। নতুন আইনে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে। তবে জরিমানা পরিশোধ করতে না পারলে সর্বনিম্ন তিন মাস ও সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড হবে।
তিনি জানান, সাইবার স্পেস অনেক বিস্তৃত। সেজন্য ডিজিটাল প্রগ্রেসের সঠিক প্রয়োগ ও নিরাপত্তা বিবেচনায় আইনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে হ্যাকিং বিষয়ে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। কেউ হ্যাকিং করেছে প্রমাণিত হলে তার ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধারায় শাস্তি কমানো হয়েছে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধের জন্য দ্বিগুণ শাস্তির বিধান বাতিল করা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, "বর্তমান সরকার জনগণের কথা শোনার সরকার। আইনটি নিয়ে জনগণের আপত্তি ছিল। যেকারণে আইনটি নতুন নামে বিভিন্ন সংশোধনী সহ করা হচ্ছে। তবে নতুন আইনেও ডিজিটাল ক্রাইম, সাইবার ক্রাইম হলে পুলিশ তল্লাশি করবে। তাৎক্ষণিকভাবে যন্ত্রপাতি জব্দও করবে। অর্থাৎ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারা নতুন আইনে সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।"
"ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ইতিমধ্যে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো চলবে। কিন্তু মামলার কার্যক্রম নতুন আইনটি পাস হওয়ার পরে নতুন বিধানে চলবে", যোগ করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, "বিদেশি বা দেশের বিভিন্ন পক্ষ সন্তুষ্ট হবে কিনা সেটা আমাদের বিষয় না। প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ আলোচনা করে দেখেছে যে, জনস্বার্থে এই আইনটির পরিবর্তন দরকার। সেজন্য আইনটি পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের হয়রানি বন্ধ হবে।"
এছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারার সাজা কমিয়ে দুই বছর করা হয়েছে। আগে এই ধারা ছিল অজামিনযোগ্য, এখন সেটি পরিবর্তন করে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। একইভাবে ৩১ ধারার শাস্তি ৭ বছর কারাদণ্ড থেকে কমিয়ে ৫ বছর করা হয়েছে। সরকারি গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ করার শাস্তি ১৪ বছর থেকে কমিয়ে ৭ বছর করা হয়েছে।
আইনটিতে মোট ৬০টি ধারা রয়েছে। এরমধ্যে ৬টি ধারা অজামিনযোগ্য।