আঁখির মৃত্যুর দায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল, চিকিৎসকের পাশাপাশি স্বামীরও: তদন্ত কমিটি
সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল, একাধিক চিকিৎসক ও আঁখির স্বামীর দায় আছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি।
গত ২ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব উম্মে হাবিবা স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদনে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালের অবকাঠামো, জনবল, যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোনো অসামঞ্জস্য রয়েছে কি-না তা যাচাই করে ব্যবস্থা নিতেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বলা হয়েছে।
আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় গত ২১ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (আইন অনুবিভাগ) আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গত ৪ জুলাই থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে মাহবুবা রহমান আঁখির স্বামী, স্বামীর ভাই ও অভিযুক্ত চিকিৎসকগণ এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত ব্যক্তিদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গত মাসের শেষ সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ১১ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তদন্ত কমিটি তাদের মতামতে উল্লেখ করেছেন, ঘটনার দিন আঁখির স্বামী স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য সেন্ট্রাল হাসপাতালে আনার বিষয়ে ডা. সংযুক্তা এবং ড্রাইভার জমিরের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু ওই দিন ডা. সংযুক্তার বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি গোপন করেন। এমনকি তার অবর্তমানে এই রোগীর চিকিৎসা ডা. শাহাজাদীকে করতে নির্দেশ দিয়ে যান। ডা. সংযুক্তা নিয়মিতই তার অনুপস্থিতিতে তার নামে চিকিৎসা দিতে অন্যদের নির্দেশ দিয়ে যেতেন।
সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. সংযুক্তা সাহা ও ডা. মুনা সাহার বিএমডিসি নিবন্ধন নবায়ন না থাকার পরেও চিকিৎসা প্রদানের অনুমতি দিয়ে অনৈতিক কাজ করেছে। সেন্ট্রাল হাসপাতাল নির্ধারিত দিনে সংযুক্তা সাহার উপস্থিত না থাকার বিষয়টি গোপন করেছে। নিয়মিতভাবে ডা. সংযুক্তা সাহা অনুপস্থিত থাকলেও তার নামে রোগী ভর্তি করে অন্য ডাক্তারদের দ্বারা চিকিৎসা করিয়েছে। এমনকি ডা. সংযুক্তা বেআইনিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিকিৎসা বিষয়ক প্রচারণা করে জেনেও তাকে নিষেধ না করে চিকিৎসার সুযোগ দিয়ে এসেছে।
তদন্ত কমিটি মনে করে আঁখির মৃত্যুর জন্য তার স্বামী ইয়াকুব আলীও দায়ী। তিনি সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত চেকআপ করেননি। রোগীর দেরিতে প্রসবের কারণে সিজার লাগতে পারে, তিতাস উপজেলার নিবন্ধিত স্বাস্থ্য কর্মীর এ পরামর্শ অগ্রাহ্য করেছেন এবং জটিলতা জেনেও স্বাভাবিক প্রসব করাতে দৃঢ় থেকেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও প্রসূতি রোগীকে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াই দীর্ঘ পথ সাধারণ গাড়িতে নিয়ে আসেন। স্ত্রীর রক্তস্বল্পতার তথ্য গোপন করেছিলেন। স্ত্রীর শারিরীক অবস্থার প্রতি উদাসীন থেকেছেন এবং উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ না করে স্ত্রীকে ঝুঁকির মুখে ফেলায় তিনিও দায় এড়াতে পারেন না।
কমিটি জানায়, ঘটনার দিন ডা. মুনা সাহা ডা. সংযুক্তা সাহার অনুপস্থিতির বিষয়টি জানতেন কিন্তু রোগীর স্বজনের কাছে সত্যি প্রকাশ করেননি। অনাকাঙ্খিত ঘটনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা স্পষ্ট হয়েছে।
আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় ডা. মিলির কোন দায় পায়নি তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির রিপোর্টের বিষয়ে যোগাযোগ করলে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।