বান্দরবানে বন্যায় ও পাহাড় ধসে মোট ৮ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ২
এক সপ্তাহের ভারী বৃ্ষ্টিতে বান্দরবানে বন্যায় ও পাহাড় ধসে এখন পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছে ২ জন এবং আহত হয়েছে ১৭ জন। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে বন্যা-পরবর্তী সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।
তবে নিহত ও আহত ব্যক্তিরা কে কোন এলাকার, তার বিস্তারিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আরও কয়েক দিন পর হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার উচ্চমান সহকারী তাসলিমা সিদ্দিকা।
দুপুরে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের আরও বলেন, ইতিমধ্যে পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বান্দরবান সদর ও লামা এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি—এই তিন উপজেলা ছাড়া অন্য তিন উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল হয়েছে। ঢাকা থেকেও কয়েকটি বাস যাওয়া-আসা করেছে।
তিনি বলেন, 'উপজেলা পর্যায়ে এ পর্যন্ত ১৬৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানিও বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণসামগ্রীর ঘাটতি নেই। পরিস্থিতি এখনও অনূকুলে রয়েছে। তবে একটাই চ্যালেঞ্জ—বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন। চতুর্থ দিনের মতো বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছি আমরা। বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।'
বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করা হচ্ছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক জানান, এখানে কৃষি বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ রয়েছে। তাদেরকে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করার জন্য বলা হয়েছে। অন্যান্য সব অঞ্চল থেকে পানি সরে গেলে তারা ক্ষয়ক্ষতির হিসাব আমাদের জানাতে পারবে।
গত এক সপ্তাহের ভারী বৃষ্টিতে বান্দরবান শহরের গোটা নিম্নাঞ্চল এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিসগুলোতে কোথাও হাঁটুসমান, কোথাও বুকসমান পানি উঠে যায়। বন্যার পানিতে সম্পূর্ণ ডুবে যায় নিম্নাঞ্চলের শত শত বসতবাড়িও।
এছাড়া রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলার সদরে সরকারি অফিস ও ঘরবাড়িও পানিতে ডুবে যায়। এ বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লামা উপজেলা। সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাদ্যগুদাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়। ইতিমধ্যে সড়ক থেকে পানি নেমে যাওয়ায় আলীকদম-লামা থেকে চকরিয়া সড়কে যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়েছে।
গতকাল বুধবার থেকে ভারী বৃষ্টি না থাকায় বান্দরবানের সব নিম্নাঞ্চল এলাকা থেকে পানি নেমে যায়। তবে সরকারি অফিস-আদালত, দোকানপাট ও ঘরবাড়িতে জমে যায় কাদাপানি। দুদিন ধরে জমে থাকা কাদামাটি পরিষ্কার করতে দেখা যায় স্থানীয় লোকজনদের।
বৃস্পতিবার সকালে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানি নেমে যাওয়ার পর দ্বিতীয় দিনে লোকজনের চলাচল বেড়ে যায়। এলাকায় এলাকায় গাড়িতে করে বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় অধিকাংশ মানুষকে জেনারেটর চালিয়ে মোবাইল চার্জ ও পানি উত্তোলন করতে দেখা গেছে।
বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও যাত্রীরা অটোরিক্সায় করে আসা-যাওয়া করছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বান্দরবান-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত চলাচল করছে বাস। তবে চট্টগ্রামমুখী সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামমুখী বাস না থাকায় যাত্রীরা কেরানীহাট পর্যন্ত বাস, অটোরিক্সা ও জীপে করে আসা-যাওয়া করছে।
বান্দরবান পূরবী-পূর্বানী বাস মালিক সমিতির সদস্য ঝন্টু দাশ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, পরিস্থিতি মাত্র স্বাভাবিক হয়েছে। বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে এখনও সব চালক স্টেশনে আসতে পারেনি। যখন যে ড্রাইভার আসেন, তাকে দিয়ে চালানো হচ্ছে। সকাল থেকে চট্টগ্রামে বাস যাচ্ছে। তবে চালকরা সবাই না আসায় গাড়ি কম ছাড়তে হচ্ছে।
এদিকে রোববার রাত থেকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় চতুর্থ দিনের মতো মোবাইল নেটওর্যাক ও ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।
বান্দরবান বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী দীপ্ত চক্রবর্তী বলেন, 'যে দুটি ট্রান্সফরমার দিয়ে বান্দরবানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় সেই দুটি ট্রান্সফরমারের প্যানেল পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে ছিল। ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ কারিগরি টিম নিয়ে এসে বুধবার রাত থেকে মেরামত করা হচ্ছে। আশা করছি, সবকিছু ঠিক থাকলে যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ সচল করা যাবে।'