পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে চট্টগ্রাম ওয়াসার ৩০০ মিলিয়ন ডলারের নতুন প্রকল্প
চট্টগ্রাম শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৩০০ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রতিস্থাপনে নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে প্রকল্পের অধীনে পাইপলাইন প্রতিস্থাপনের পাশাপাশি ৪৬টি ডিএমএ (ডিস্ট্রিক্ট মিটারিং এরিয়া) স্থাপন করা এবং ৪০ হাজার গ্রাহককে স্মার্ট মিটারের আওতায় আনা হবে। এছাড়া জরুরি পরিস্থিতির জন্য ৪০টি গভীর নলকূপও প্রতিস্থাপন করা হবে।
গত বছরের জুন থেকে বছরব্যাপী সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে ফ্রান্সভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা সুয়েজ। ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাকি ৫০ মিলিয়ন ডলার সরকার বহন করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শহরের দূরবর্তী গ্রাহকদের পানি না পাওয়ার দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল আহসান চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নতুন প্রকল্পের প্রপোজাল (ডিপিপি) প্রণয়নের কাজ চলছে। মন্ত্রণালয় ডিপিপি অনুমোদন দিলে দাতা সংস্থার সঙ্গে ঋণচুক্তি হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।"
তিনি আরো বলেন, "পুরাতন পাইপলাইনের মধ্যে যেগুলো ভালো আছে, সেগুলো রাখা হবে। বাকিগুলো পরিবর্তন করা হবে। পাহাড়ি ঢলে পানি ঘোলা বা লবণাক্ততা বৃদ্ধির সময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় কালুরঘাটে ৪০টি গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপন করা হবে। ডিএমএ ও স্মার্ট মিটার বসালে পানির সরবরাহ, প্রেশারসহ যাবতীয় হিসেব পাওয়া যাবে। নগরীর নাসিরাবাদ ও হালিশহরের দুটি স্টোর সংস্কার করা হবে।"
ওয়াসার নথিপত্রের তথ্যমতে, বর্তমানে নগরীর ১৬৮ দশমিক ২১ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার পাইপলাইন নেটওয়ার্ক আছে সংস্থাটির। এরমধ্যে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-০১ এর অধীনে ৪৫ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন ও স্যানিটেশন প্রকল্পের (সিডব্লিউএসআইএসপি) অধীনে ১৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নেটওয়ার্ক প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।
এছাড়া কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-০২ এর অধীনে শহরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে ৫৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৭০০ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রতিস্থাপন হয়েছে। প্রকল্পটির অধীনের ডিস্ট্রিক্ট মিটারিং এরিয়া-ডিএমএ প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে। স্থাপিত ৫৯টি ডিএমএ'র মাধ্যমে পানির সরবরাহের পরিমাণ ও চাপ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এর বাইরে নগরীর পতেঙ্গা, কাট্টলী, জাকির হোসেন সড়ক, দক্ষিণ খুলশী, ফয়েজ লেক, আকবর শাহ ও হাটহাজারীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পুরাতন পাইপলাইন দিয়ে চলছিল।
নগরী ছাড়াও ভান্ডাল-জুড়ির পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে বোয়ালখালী, পটিয়া ও আনোয়ারা তিন উপজেলায় নতুন করে ১৩৩ কিলোমিটার পাইপলাইন নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্যমতে, বর্তমানে তাদের আবাসিক গ্রাহক সংযোগ ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। নগরীর প্রায় ৩২ লাখ মানুষ সংস্থাটির সেবার আওতায় রয়েছে। মোট পানির চাহিদা ও উৎপাদন ৫০ কোটি লিটার। এরমধ্যে শেখ রাসেল পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প ০১ ও ০২ থেকে ১৪.৩ কোটি লিটার করে মোট ২৮.৩ কোটি লিটার এবং মোহরা পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে ৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করা হয়। মূলত কর্ণফুলী ও হালদা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে পরিশোধন করা হয়। এছাড়া গভীর নলকূপ থেকে আসে ৪ কোটি লিটার পানি। তবে সিস্টেম লসের কারণে অ-রাজস্বভুক্ত খাতে প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ পানি অপচয় হয়।
নতুন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পাইপলাইন স্থাপনের ফলে পানি সরবরাহ নেটওয়ার্কের উন্নয়ন ও প্রসার ঘটবে। ৫টি সেক্টরে ভাগ করে ৪৬টি ডিএমএ এবং ৪০ হাজার অটোমেটেড মিটার রিডিং ফিচারের স্মার্ট ওয়াটার মিটার স্থাপন হলে অ-রাজস্বভুক্ত পানির হার কমবে।
সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, "শহরের কিছু অংশে পুরাতন পাইপলাইন আছে। ডিএমএর মতো আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় না আসায় পানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ফলে প্রয়োজন অনুসারে পানির প্রেশারও নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করা যায় না। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে গ্রাহকরা নিয়মিত পানি পাবেন। অ-রাজস্বভুক্ত পানির হারও কমবে।"
তিনি আরো বলেন, "বিদ্যমান পাইপলাইনগুলো সড়কের মোড় পর্যন্ত। এরপর ছোট ছোট পাইপ দিয়ে গ্রাহকের বাড়িতে লাইন টানা হয়। নতুন নেটওয়ার্কে গ্রাহকের বাড়ির সামনে পাইপলাইন পৌঁছে যাবে। এজন্য ৩০০ কিলোমিটার আরো বাড়বে।"