প্রতিশ্রুত নিরাপত্তা দৃশ্যমান হলে কাজে ফিরবেন ওসমানী মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা
সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীর স্বজনদের হাতে হেনস্তা ও ভাংচুরের শিকার হওয়ার অভিযোগে ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে বৈঠক করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বৈঠকের পর বিকেলে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত মজুমদার জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন।
বুধবার বেলা ১২ টার মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃশ্যমান উন্নতি হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব আলম ভূঁইয়া। এই সময়ের মধ্যে যদি আমাদের চোখে তা পরিলক্ষিত হয় তবে আমরা আমাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিব। এর পূর্ব পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।
সোমবার বিকেলে হাসপাতালের ৩৫ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রোগী মারা যান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সাথে রোগীর স্বজনদের কথা কাটাকাটি হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ, রোগীর স্বজনরা ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের হেনস্তা করেন। এসময় চিকিৎসকরা দৌড়ে পাশের ওয়ার্ডে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। এরপর রোগীর স্বজনরা ওয়ার্ডের ভেতরে চিকিৎসকের কক্ষে ও নার্সের কক্ষে ভাংচুর চালান। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাতে বৈঠক করে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেয় হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
হাসপাতালে ভাংচুর চালানোর ঘটনায় কর্তৃপক্ষ চারজনের নাম উল্লেখ করে সোমবার রাতেই সিলেট মহানগরের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেছে। এর আগে এ ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে। তারা হলেন- আব্দুল মালিক (৫৪), জুয়েল আহমদ (২৭), সাবেল আহমদ (২১), জুয়েল আহমদ (২০)। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মামলায় পুলিশ রোগীর এই চার স্বজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। তবে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সুচিকিৎসা না পেয়ে ওই রোগী মারা গেছেন।
কর্মবিরতির ডাক দেওয়ার পর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই দফায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে বৈঠক করলেও কর্মবিরতি থেকে সরে যাননি আন্দোলনকারীরা। সর্বশেষ মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের নেতাদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেমিনার কক্ষে বৈঠকে বসে। বিকেল চারটা পর্যন্ত টানা বৈঠক চলে। সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ব্যাপারে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা গ্রহণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয়। বৈঠকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়াসহ জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা বেরিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। সেখানে সবাই সিদ্ধান্ত নেন, বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি তাদের কাছে নিরাপত্তার বিষয়টি দৃশ্যমান হয়, তবে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেবেন।
এদিকে, সোমবার রাত থেকে চলা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এ ধর্মঘটের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
তবে সেবা ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, মিড লেভেলের চিকিৎসকরা ওয়ার্ডগুলোতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে হাসপাতালের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও দ্রুত কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেবেন বলে আশা তার।