‘মাত্র চারদিনের জ্বরে আমার মেয়েটা চলে গেল’
দুই বোন এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছে। মা-বাবার কষ্ট কম হবে ভেবে ছোট তাসনিয়া চেয়েছিল বড় বোন তাসফিয়ার সঙ্গে একই কলেজে পড়তে। তার ইচ্ছে পূরণ হলো, ঢাকার একটি কলেজে ভর্তির জন্য তাসফিয়া-তাসনিয়ার নাম এল। কিন্তু বোনের সঙ্গে কলেজে যাওয়ার আগেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে তাসনিয়া।
চারদিন জ্বরে ভোগার পর ২ সেপ্টেম্বর রাতে আইসিইউতে নেওয়ার পথে মারা যায় রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা ১৭ বছর বয়সী তাসনিয়া। 'মেয়েটা চলে যাচ্ছে বোঝাই গেল না… মাত্র চারদিনের জ্বরে আমার মেয়েটা চলে গেল,' দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন তাসনিয়ার বাবা খালেক মাহমুদ বাবু।
'আমার মেয়েটা খুব শক্ত ছিল। ওর যে এত কষ্ট হচ্ছিল, তা দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না। মারা যাওয়ার এক মিনিট আগেও পানি খেল। ডাক্তার অল্প পানি দিতে বলেছিলেন। সে বোতলটা টেনে নিয়ে অনেকটা পানি খেল — তারপরই সব শেষ,' বলেন খালেক মাহমুদ।
এর আগে গত মাসের শেষদিকে তাসনিয়া, তার বোন, ও মায়ের জ্বর আসে বলে জানান তিনি। একদিন পর সবার জ্বর সেরে গেলেও ২৯ আগস্ট তাসনিয়ার আবার জ্বর এলে পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে।
শিশু হাসপাতালের এক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বাসায় স্যালাইন ও ইনজেকশন দিয়ে তাসনিয়ার চিকিৎসা করিয়েছিল পরিবার। পরে অবস্থার অবনতি হলে ২ সেপ্টেম্বর তাকে ডিএনসিসি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখান থেকে ওইদিন রাত দশটায় ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়ার সময় মাঝপথে মারা যায় তাসনিয়া।
'সবচেয়ে কষ্টকর হলো, ঢাকা শহরে ডেঙ্গুরোগীর জন্য আইসিইউ পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার চাইতে ডেঙ্গুতেও কম মারা যাচ্ছে না! কিন্তু তারপরও ডেঙ্গুর মতো মহামারি নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই,' বলেন খালেক মাহমুদ।
মশার মারার কোনো উদ্যোগ নেই অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, 'আমাদের এলাকায় মশার ওষুধ দেয়না। কমিশনার হাস্যকর কথা বলে — এলাকায় এত গাছ, ওষুধ দিয়ে কী হবে?'
চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে। শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭১৬ জন। এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন ২৮১ জন।