নির্বাচনে ডিসিদের পক্ষপাতমূলক আচরণ চাই না: সিইসি
নির্বাচনের কোনো অবস্থাতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) পক্ষপাতমূলক আচরণ চায় না নির্বাচন কমিশন, এমনটি জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ায় জামালপুরের জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে দেওয়া চিঠির প্রসঙ্গে সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক পদটা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতে হয়। পাশাপাশি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নির্বাচনের সময় অতি অনিবার্য আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি তাদের দেখতে হয়। কাজেই আমরা কোনো অবস্থাতেই চাইবো না জেলা প্রশাসকের পক্ষপাতমূলক কোনো আচরণ।
সিইসি আরও বলেন, তফসিলটা হচ্ছে নির্বাচনের চূড়ান্ত পর্যায়। যেখান থেকে ধাপে ধাপে আমাদের পোলিং ডে এবং নির্বাচন ঘোষণা করতে হয়। এখন নির্বাচনের আগেও যদি যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন তাদের পক্ষপাতহীন আচরণ নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন অবশ্যই সেটা সরকারের নজরে আনতে পারে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জামালপুরের ডিসির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আমরা চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলাম তাকে প্রত্যাহার করে জেলা প্রশাসকদের সতর্কবার্তা দিতে যেন এ ধরনের আচরণ না হয়। এটা নির্বাচনের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের স্বার্থে।
চিঠি প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, তফসিলের আগে এমন চিঠি দিতে কোনো বাধা নেই। পাঁচ বছরের পুরো সময়ে আমাদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, কর্তব্য ও এখতিয়ার রয়েছে।
নির্বাচনের পরিবেশ নেই, বিরোধী দলগুলোর এমন অভিযোগের ব্যাপারে ইসির করণীয় কি জানতে চাইলে সিইসি বলেন, এমন জটিল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে না এই মুহূর্তে। তবে অবশ্যই আমরা ভোটের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করব।
হাবিবুল আউয়াল উদাহরণ দেন, 'মনে করুন, কাল জেলা প্রশাসকেরা একটা অ্যাসোসিয়েশন করলেন। তারা সবাই ঢাকা এসে বললেন, এবার একটা বিশেষ দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবেন। নির্বাচন আরও ছয় মাস পর। ইসি কি নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকব? সেখানে তাদের তো একটি নির্দেশনা দিতে হবে যে তারা এভাবে আচরণ করতে পারেন না।"
ডিসিকে প্রত্যাহারের মত ব্যবস্থা আরো নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে সিইসি বলেন, যদি আমাদের কাছে এমন কিছু প্রতীয়মান হয় তাহলে অবশ্যই এমন উদ্যোগ নেব।
হাবিবুল আউয়ালের কাছে প্রশ্ন করা হয়, ইসি তার রোডম্যাপে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করা। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।
শিডিউল ঘোষনা হয়নি, এখন কেউ ভোট চাইতে পারবেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর তিনি এখন দিচ্ছেন না।
হাবিবুল আউয়ালের কাছে আবার প্রশ্ন করা হয়, তিনি বলছেন তফসিলের আগেও নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের কিছু করার সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে যখন প্রধানমন্ত্রী সফরে বা রাষ্ট্রীয় কোনো কাজে যাচ্ছেন, সরকারি কাজে যাওয়ার পরও যখন ভোট চাইছেন, সেখানে কমিশনের কি কথা বলার এখতিয়ার আছে?
জবাবে সিইসি বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর চট করে দিতে পারবো না। এখন সবাই নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। বিএনপি কথা বলছে, আওয়ামী লীগ কথা বলছে, জাতীয় পার্টি কথা বলছে, সবাই কথা বলছেন তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন আপনারা আমাদের ছাড়া কাউকে ভোট দেবেন না তাহলে নিশ্চয়ই আমরা ইন্টারফেয়ার করতে পারি। যখন তফসিল ঘোষণা করা হয় তারপরে যে নির্বাচনী আচরণ...তিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন কি দাঁড়াবেন না সেটা আমরা জানি না। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি করবেন না সেটা আমরা জানি না। কাজেই সেটা সময় হলে আমরা দেখবো।
ইসি যেসব সংলাপ করেছে তার অর্জন কী, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, অর্জন তো ওখানে বলা হয়েছে। আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি। দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা আমাদের দায়িত্ব। যেমন এই আমার ওপরও একটা মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি হয়। দায়িত্বটা শুধু আমাদের না। সরকার, রাজনৈতিক দল, ভোটার সবার যে দায়িত্ব রয়েছে এমন সেমিনার বা আলোচনা থেকে সে ব্যাপারে কিছুটা হলেও দায়িত্ববোধ বা চাপ সৃষ্টি হতে পারে।