দুই বাঘের বিনিময়ে এবার একজোড়া জলহস্তী আসছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়
প্রজনন কর্মসূচিতে অসামান্য সফলতার সুনাম অর্জন করা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা এবার বাঘের বিনিময়ে এক জোড়া জলহস্তী আনতে যাচ্ছে।
বুধবার ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে জলহস্তী নিয়ে আসার এ উদ্যোগ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জন্য একটি মাইলফলক উন্মোচন করতে যাচ্ছে। চিড়িয়াখানাটি বেশ কিছুদিন ধরেই প্রাণীর সংগ্রহে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। মাত্র ছয় বছরেই এ চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬-তে।
ছয় বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এক জোড়া বাঘ কেনে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তাদের নাম দেওয়া হয় রাজ ও পরী। ৩৩ লাখ টাকা বিনিয়োগে এ বাঘ দুটি নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে একে একে ১৪টি শাবকের জন্ম দিয়েছে এ দুটি বাঘ। এর ফলেই চিড়িয়াখানায় মোট বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬-তে; যার মূল্যমান এখন ৬ কোটি টাকা।
তবে এক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবার নজর কাড়ে তা হলো, রাজ-পরী এ দুটি বাঘ কমলার মধ্যে কালো ডোরাকাটা হলেও, তাদের ১৪ শাবকের মধ্যে ৫টি শাবকই বিরল সাদাকালো ডোরাকাটা।
বাঘের জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেওয়ায় তারা অতিরিক্ত বাঘের বদলে অন্য প্রাণী নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিনিময় কর্মসূচির আওতায়, জাতীয় চিড়িয়াখানা এক জোড়া জলহস্তী দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এ প্রাণীটি নেই।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ জানান, বৈচিত্র্যময় প্রজাতীর প্রাণী আনতে ছয় মাস আগে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিনিময় কর্মসূচির প্রস্তাব করা হয়।
"রংপুর চিড়িয়াখানায় দুটি বাঘ বিনিময়ের বদলে আমাদেরকে এক জোড়া জলহস্তী দেওয়ার প্রস্তাব দেয় জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ," বলেন তিনি।
ডা. শুভ আরো জানান, জলহস্তীদের জন্য নতুন আবাসস্থল তৈরি করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে প্রাণীগুলোকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে।
তবে, সাদা বাঘগুলোকে বিনিময় করা হচ্ছে না।
"সাদা বাঘ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। দর্শনার্থীরা মূলত এ বাঘগুলোকেই দেখতে আসে। তাই এখন এগুলোকে বিনিময় করার কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই," বলেন তিনি।
দুই থেকে তিন বছর বয়সী এক জোড়া বাঘকে আজ (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় চিড়িয়াখানায় পাঠানো হবে, এবং সাত থেকে আট বছর বয়সী এক জোড়া জলহস্তী পরের দিন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় পৌঁছাবে। এ প্রাণীগুলো আনা হলে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রাণী প্রজাতির বৈচিত্রের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬৮-তে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, চিড়িয়াখানায় গত এক বছরে সিংহ, লামা, ক্যাঙ্গারু, ম্যাকাও এবং ওয়াইল্ডবিস্ট সহ বেশ কয়েকটি নতুন প্রজাতির প্রাণী আনা হয়েছে।
অদূর ভবিষ্যতে তিনটি জিরাফ এবং পাঁচটি আমেরিকান ফ্ল্যামিঙ্গো আমদানি করার এবং চিড়িয়াখানায় পাখির সংগ্রহ সম্প্রসারণের পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
ফয়েজ লেক এলাকায় ১৯৮৯ সালে চালু হওয়ার পর থেকে চিড়িয়াখানাটি ১০ একর জায়গা জুড়ে বেড়েছে। এ চিড়িয়াখানায় নানা প্রজাতির ৬২০টি প্রাণী রয়েছে। সাদা বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, কুমির, বিভিন্ন হরিণ এবং বানর, শিম্পাঞ্জি, পেঁচা, সজারু, শেয়াল, জেব্রা, ময়ূর, উটপাখি, ইমু, তিতির, তোতা, বাজপাখি, শকুন, টার্কি, কবুতর, পাইথন এবং অন্যান্য সাপ রয়েছে এ চিড়িয়াখানায়।
প্রতিদিন গড়ে ৩,০০০ দর্শনার্থী ভ্রমণ করে এ চিড়িয়াখানায়। টিকিট বিক্রি থেকে চিড়িয়াখানাটি বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আয় করে থাকে।