জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ ব্যাগ স্যালাইন আমদানি করবে সরকার
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করায় ও হাসপাতালগুলোতে স্যালাইনের সংকট দেখা দেওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ ব্যাগ স্যালাইন আমদানি করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমদানি করে স্যালাইনের সরবরাহ বাড়াতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এসব স্যালাইন আমদানি করা হবে। প্রস্তাবটির নীতিগত অনুমোদনের জন্য বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০ লাখ ব্যাগ স্যালাইনের মধ্যে ১২ লাখ পিস নরমাল স্যালাইন (১০০০ মিলিলিটার) ও ৮ লাখ পিস গ্লুকোজ স্যালাইন (১০০০ মিলিলিটার) আমদানি করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ২৯.১৯ কোটি টাকা।
দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করায় গত ১৩ আগস্ট স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় চলতি অর্থবছর ৭ লাখ ব্যাগ নরমাল স্যালাইন (১০০০ মিলিলিটার) এবং গ্লুকোজ স্যালাইন (১০০০ মিলিলিটার) কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ৩ লাখ ব্যাগ আইভি ফ্লুইড সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনা হয়েছে, যা মঙ্গলবার থেকে সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে টিবিএসকে বলেন, তাদের ধারণা ছিল সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব হ্রাস পাবে। কিন্তু সম্প্রতি বৃষ্টির ব্যাপকতায় ডেঙ্গু মশার বিস্তার আরো বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
'এ কারণে দেশে আইভি ফ্লুইডের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এ পর্যায়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার স্বার্থে জরুরি প্রয়োজনে আরও ২০ লাখ পিস আইভি ফ্লুইড আমদানির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে', জানান ওই কর্মকর্তা।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের যেকোন সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় ইনজেকটেবল স্যালাইনের চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্যালাইনের সংকট কিছুটা কাটলেও প্রাইভেট হাসপাতাল ও ফার্মেসিতে স্যালাইনের সংকট অনেক বেশি।
স্যালাইন সংকটের কারণে ডেঙ্গু রোগীর পাশাপাশি সার্জারি, ডায়ালাইলিস সহ অন্যান্য রোগীরাও সমস্যায় পড়ছে। বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনেরা তিন থেকে চারগুণ দামে স্যালাইন কিনছে। দেশে আইভি স্যালাইনের দাম সর্বোচ্চ ৯০-১০০ টাকা হলেও তা কোথাও কোথাও ৫০০ টাকা দরেও কিনতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় স্যালাইনের চাহিদা পাঁচ-সাতগুণ বেড়েছে। রাজধানীতে চাহিদার ৫০% স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছে কোম্পানিগুলো। আর রাজধানীর বাইরে চাহিদার মাত্র ৩০% স্যালাইন সরবরাহ হচ্ছে। বাজারে স্যালাইনের সংকটের কারণে ৫০০ টাকা দিয়েও স্যালাইন কিনতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা।
অন্যদিকে, দেশের সবচেয়ে বড় স্যালাইন উৎপাদক কোম্পানি লিব্রা ইনফিউশনস লিমিটেডের উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক এক লাখ ব্যাগ হলেও ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের অভাবে কোম্পানি উৎপাদন করছে মাত্র ১৫,০০০ ব্যাগ। স্কয়ার গ্রুপের একটি স্যালাইন উৎপাদক ইউনিট কয়েকমাস ধরে বন্ধ রয়েছে। দেশের বাকি কোম্পানিগুলো তিন শিফটে উৎপাদন সচল রেখেও চাহিদার অর্ধেকও যোগান দিতে পারছে না।
এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বাভাবিক সময় প্রতি মাসে স্যালাইনের চাহিদা ছিল ৪০-৫০ লাখ ব্যাগ। এখন তা বেড়ে ২.৪০-৩ কোটি ব্যাগ হয়েছে। বর্তমানে ছয়টি কোম্পানি উৎপাদনে আছে। এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপ সর্বোচ্চ দিনে ৩০,০০০ ব্যাগ স্যালাইন উৎপাদন করছে। কোম্পানিগুলো তিন শিফটে পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতায় মাসে ৬৫ লাখ পর্যন্ত যোগান দিতে পারবে।
ওরিয়ন ইনফিউশনের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল বাশার বলেন, তারা ছুটির দিনসহ তিন শিফটেই স্যালাইন উৎপাদন করছেন। দৈনিক উৎপাদিত ২৫,০০০ ব্যাগের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১০,০০০ ব্যাগ সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকিটা বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে।
কোম্পানিগুলো বলছে, স্যালাইনের দাম সরকার নির্ধারণ করে দেয়। ফলে মূল্যস্ফীতি বা ডলার সংকটের কারণে কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ওষুধের দাম যেভাবে বাড়াতে পারছে, স্যালাইনের ক্ষেত্রে তা পারছে না। ফলে এ খাতে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়ানোর দিকে কোম্পানিগুলোর আগ্রহ নেই। ২০১৫ সালের পর ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো স্যালাইন উৎপাদনের জন্য কোন বিনিয়োগ করেনি।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি ব্যাগ স্যালাইনের দাম এখন ৪৩ রুপি। আর বাংলাদেশে প্রতি ব্যাগ স্যালাইনের মূল্য ৯০-১০০ টাকার মধ্যে। তারপরও স্যালাইন বিক্রি করে না পোষানোর ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়।