ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে হাঁটা ও সাইকেলবান্ধব সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি
রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে হাঁটা ও সাইকেলবান্ধব সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন ও নগর পরিকল্পনাবিদরা।
তাদের দাবি, রাজধানীতে একের পর এক নির্মিত উড়ালসড়কের কোনোটিই যানজট কমাতে পারেনি। সদ্য আংশিক চালু হওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও যানজট কমাতে পারেনি বরং কিছু জায়গায় বেড়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কে জায়গা দখল করে বেশি, যাত্রী পরিবহন করে খুবই কম। তাই নগর এলাকায় টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত 'ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা ও ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহ' শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ইনস্টিটিউট ফর প্লানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, মানসম্মত গণপরিবহন এর অভাবে মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ায় এর সংখ্যা, ব্যবহার, ও যানজট বেড়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ এবং টেকসই পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। পথচারীবান্ধব নগর গড়ার জন্য ফুটপাত নির্মাণ ও হাঁটার উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, "আমাদের নগর নিয়ে অনেক পরিকল্পনা হয়েছে কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। যে রাষ্ট্র জাপান থেকে মেট্রোরেলের বগি কিনে আনতে পেরেছে সেই রাষ্ট্র কেন ৩/৪ হাজার বাস আনতে পারবে না? ঢাকা সিটির বাসগুলো অধিকাংশই চলাচলের অনুপযোগী।"
এ নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, "পৃথিবীর যতোগুলো মেগা সিটি আছে, ঢাকার মতো এতো অপরিকল্পিত নগর মনে হয় আর একটিও নেই। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জনপ্রতিনিধি, আমলা তাদেরকে অবশ্যই মাসের নির্দিষ্ট সময় গণপরিবহনে চড়তে হবে। তাহলেই পরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তন আসবে।"
সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, "উন্নয়ন হতে হবে সাধারণ মানুষের জন্য। ফলে পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে গাড়িমুক্ত রাস্তা তৈরি করা, শহরের বিভিন্ন রুটের জন্য বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের সেবা ও পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার এর মত ব্যয়বহুল প্রকল্পসমূহে বিনিয়োগ কমিয়ে গণপরিবহন তথা বাস, রেল ও নৌপথে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। বহুমাধ্যমভিত্তিক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গবেষণা, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।"
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবীর সুমন বলেন, বাংলাদেশে ২০০৬ সাল থেকে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উদযাপন করা হলেও নীতিনির্ধারণী মহল থেকে কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে বহুমাধ্যমভিত্তিক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদিয়া আফরোজ বলেন, "হাঁটা, সাইকেলবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ যাতায়াত পরিবেশ নিশ্চিতে নগর এলাকায় পরিকল্পনামাফিক কার ফ্রি স্কুল জোন গড়ে তোলা প্রয়োজন।"
আইপিডি'র পরিচালক মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, "ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন গড়ে ওঠায় শিক্ষা, কর্মসংস্থান, চিকিৎসার জন্য মানুষ এ শহরে আসে। ঢাকায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সমগ্র দেশে উন্নয়ন নিশ্চিতে উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। স্কুল ডিস্ট্রিক্ট কনসেপ্ট এর মাধ্যমে এলাকার স্কুলেই যেন শিশুরা হেঁটে যেতে পারে সেদিকে জোরারোপ করা প্রয়োজন। এজন্য প্রতিটি এলাকায় সমমানের স্কুল নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট হতে হবে।"
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, "প্রতিবছরের ন্যায় ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে র্যালি, সাইকেল র্যালি, খিলগাঁও ও মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটিতে গাড়িমুক্ত সড়ক কর্মসূচির মাধ্যমে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আমরা সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চাই।"