বিআরআই উদ্যোগ: ১০ বছরে চীনের অর্থছাড় ৪.৪৫ বিলিয়ন ডলার
দেশের সড়ক রেল আইসিটি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য গত ১০ বছরে ৩৫ প্রকল্পের আওতায় ৪৪৫ মিলিয়ন ডলার (৪.৪৫ বিলিয়ন) অর্থছাড় করেছে চীন।
৩৫ টি প্রকল্পের মধ্যে ১০টি প্রকল্প বাস্তায়ন হয়েছে আর ২০টি প্রকল্পের কাজ আগামীতে শুরু হবে।
মূলত, দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর আওতায় এসব প্রকল্প বাস্তায়ন করেছে চীন। বাংলাদেশ ২০১৩ সালে চীনের সাথে বিআরআই- তে সাক্ষর করে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে চীনা দূর্তাবাস আয়োজিত 'দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ: অ্যাচিভমেন্ট এন্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড' শীর্ষক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা র্যাপিডের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক।
বিআরআই আওতায় প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম পদ্মা ব্রিজ রেল লিংক প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেল, কক্সবাজার বিমানবন্দর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা মন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেন, চীনা বিনিয়োগের মাধ্যমেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে পেরেছে।
চীনের ১৬টি কোম্পানি তাদের দক্ষিণ এশিয়ার হেডকোয়ার্টার বাংলাদেশে স্থাপন করেছে। পারস্পরিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দুই দেশ ব্যবসা, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি বিনিময় অব্যাহত রাখবে।
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশে বিআরএই এর বিনিয়োগ জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশে ২১টি সেতু ও ২৭টি পাওয়ার প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে।
৬৭০টি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশের ১০০টি ইকোনমিক জোনের অনেকগুলোতেই চীনের অংশগ্রহণ থাকবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে র্যাপিডের চেয়ারম্যান রাজ্জাক বলেন, "বিআরআই বেল্টের আওতায় ৭০টি দেশ রয়েছে। আমরা তাদের এই বিনিয়োগ থেকে সুবিধা পেতে চাই।"
"আমাদের অবকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। সে জায়গায় আরো উন্নয়ন দরকার। চীন বিশ্বে বাণিজ্যে অবস্থান ধরে রেখেছে। আমাদের তাদের থেকে সুযোগ সুবিধা নিতে হবে।"
তিনি আরো বলেন, "বিআরআই প্রকল্পের আওতায় ১০ বিলিয়ন বিনিয়োগ পেলে দেশের জিডিপি ২ থেকে ৪ শতাংশ বাড়বে। এছাড়া এই প্রকল্প বাংলাদেশে ব্যাবসা বাণিজ্যে প্রসারের সহযোগিতা বাড়বে। বৈশ্বিকভাবে এই প্রকল্প বাস্তায়ন হলে ৭৫টি দেশে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যয় কমে যাবে।"
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা বলেন, "বিআরআই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সারাবিশ্বে আমাদের রপ্তানি বাড়বে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। এটা শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করবে না। ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নেও কাজ করবে। বিআরআই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে আরো অনেক মানুষ উপকৃত হবে।"
তিনি আরো বলেন, "আমরা আমাদের বন্ধুদেশ চীনের কাছ থেকে মোট ঋণের ৭ থেকে ৮ শতাংশ পেয়েছি অনেক সহজ শর্তে। আশা করি সামনের দিনে এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।"
তিনি আরো বলেন, কোভিডের পর বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়ছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ২৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যার ৯০% আমদানি হয় শিল্পের কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারি। কোভিডকালীন লকডাউনের সময় ছাড়া একদিনের জন্যও সরবরাহ ব্যাহত করেনি চীন।
এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন বলেন, "এই বিআরআই প্রকল্পগুলো আমাদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগের সুযোগ আরো বেড়েছে। তবে আমাদের দক্ষতা উন্নয়নের দিকে ধাবিত হতে হবে। দক্ষতার বৃদ্ধির উপর জোর দিতে হবে।"