ডেঙ্গু ঝুঁকিতে বেশি শিশুরা, এ পর্যন্ত ১০২ শিশুর মৃত্যু
চলতি বছর ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। দেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৮৭৯ জন; এরমধ্যে ১-১৫ বছর বয়সী শিশু রয়েছে ১০২ জন।
এর আগে কখনও দেশে ডেঙ্গুতে এত শিশুর মৃত্যু হয়নি।
দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, ডেঙ্গুর লক্ষণ পরিবর্তন, দেরিতে হাসপাতালে নিয়ে আসার কারণে শিশুমৃত্যু বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শিশুর জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা ও সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
পেডিয়াট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহবুব মুতানাব্বি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের অভিজ্ঞতায় মনে হচ্ছে, এবারের ডেঙ্গুতে শিশু মৃত্যুর বড় কারণ হলো দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়া। এর আগে, হয়তো এই শিশুরা ডেঙ্গুর অন্যকোনো স্ট্রেইন দিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল; এবার ভিন্ন ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছে, যার ফলে সিভিয়ারিটি বেড়েছে।"
এ বছর ডেঙ্গুর লক্ষণ বদলও শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ উল্লেখ করে ডা. মাহবুব মুতানাব্বি বলেন, "আগে জ্বর ৩-৫ দিন থাকতো, এরপর জ্বর চলে গিয়ে শকে চলে যেত রোগী। জ্বর চলে যাওয়া এবং আবার জ্বর-এটাই ছিল শকে যাওয়ার লক্ষণ। কিন্তু এখন ১-২ দিনের জ্বরে রোগী শকে চলে যাচ্ছে, রোগীর ব্রেন অ্যাটাক হচ্ছে, খিচুনি হচ্ছে। হঠাৎ রোগীর অবস্থার অবনতি হচ্ছে, আইসিইউতে নিয়েও বাঁচানো যাচ্ছেনা।"
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ০-৫ বছর বয়সী ৩৪ জন, ৬-১০ বছর বয়সী ৪৪ জন, ১১-১৫ বছর বয়সী ২৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে দেশে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশই শিশু।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যায় ৭ বছরের শিশু আলিফ ইসলাম শাওন। টঙ্গির একটি প্রাইভেট স্কুলে প্রি-প্রাইমারিতে পড়াশোনা করতো সে। শাওনের সাথে তার বড় ভাই অয়ন ইসলামও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। অয়ন সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরলেও, শাওনের আর বাড়ি ফেরা হয়নি।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরও ১৪ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং ২ হাজার ৮৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এ বছর মোট ১,৮৪,৭১৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৪,৪৩৫ জনই শিশু।
ডেঙ্গু নিয়ে প্রচারণ-প্রচারণা না চালানো, চিকিৎসাসহ সবকিছুতে গুরুত্ব না দেওয়ায় অনেকেই ডেঙ্গু নিয়ে সচেতন নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ডা. মাহবুব মুতানাব্বী বলেন, "যতদিন ডেঙ্গুর প্রকোপ না কমে, ততোদিন শিশুর জ্বর হলেই ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে। জ্বরের সাথে কাশি, বমি, পেট ব্যাথা যেকোনো লক্ষণ থাকুক না কেনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক অভিভাবক অসচেতনার কারণেও রোগীকে হাসপাতালে আনতে দেরি করে; কিন্তু বাচ্চা যখন শকে চলে যায়, তখন আর কিছু করার থাকেনা।"
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক (ইন্টারনাল মেডিসিন) ডা. ফজলে রাব্বি চৌধুরী, "বড়দের মত বাচ্চারা ওরার্নিং সাইন (গুরুতর লক্ষণ) প্রকাশ করতে পারেনা। শিশুদের ক্ষেত্রে সিভিয়ার ডেঙ্গু যেটাতে ফ্লুইড লিক হয়, ব্লিডিং হয় বা শকে চলে যায় তা ম্যানেজ করা খুবই জটিল।"।
"তাই ডেঙ্গু হলে বাচ্চা প্লেফুল (হাস্যোজ্জ্বল) আছে কিনা, পানি শূন্যতা দেখা দিয়েছে কিনা, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে কিনা– এসব বিষয় অভিভাবকদের লক্ষ্য রাখতে হবে, কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে," যোগ করেন তিনি।