প্লাস্টিক শিল্পনগরীতে কারখানা স্থাপনে প্রয়োজন ৩,৬৬০ কোটি টাকার প্রকল্প: সমীক্ষা
মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদীখানে প্লাস্টিক শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য গড়ে উঠছে প্লাস্টিক শিল্প নগরী। ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যেক্তাদের কারখানা সেখানে স্থানন্তরিত করার জন্য সরকারকে নতুন করে ৩,৬৬০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিতে হবে বলে উঠে এসেছে এক সমীক্ষায়।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এর অফিসে 'ইমার্জিং সেফটি রিস্কস ইন দ্য প্লাস্টিক সেক্টর: হোয়াট নিডস টু বি ডান' শীর্ষক এক ওয়ার্কশপে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের রিসার্চ ডিরেক্টর ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করে সারাদেশে এমন প্রায় ৫,০০০ কারখানা আছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এসব কারখানায় বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ৫ বছরে ৮৪ শতাংশ অগ্নি দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটেছে এসব জায়গায়। তাই কারখনাগুলো পরিকল্পিত শিল্প এলাকায় দ্রুত স্থানান্তর করতে হবে। বিশেষ করে, পুরান ঢাকায় যে কারখানাগুলো আছে, সেগুলোকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমই), সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এবং ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটাং বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, "সরকারকে অবিলম্বে আবাসিক এলাকা এবং বহুতল ভবনে অবস্থিত বিশেষ করে পুরান ঢাকা এলাকা থেকে প্রায় ১,২০০ কারখানা স্থানান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন করা উচিত। স্থানান্তর হলে তা নিঃসন্দেহে পুরান ঢাকার এবং এসব কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাস করবে।"
তিনি বলেন, সিপিডির তথ্যমতে এ ধরনের স্থানান্তরের জন্য প্রায় ৩,৬৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। আশা করা হচ্ছে, সরকার একটি দ্বিতল (৮,০০০ বর্গফুট) শিল্পস্থান নির্মাণের জন্য প্রত্যেক মালিককে প্রায় ১০ কাঠা করে জমি বরাদ্দ দেবে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন কারখানা মালিকদের প্রতি কাঠা ১০ লাখ টাকা ভর্তুকিতে জমি দেবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, স্থানান্তর প্রকল্প তহবিলের মোট ব্যয় ২৫ বছরের মধ্যে মালিকরা পরিশোধ করবেন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির দ্রুত অনুমোদনের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে শিল্প মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এছাড়া, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের অবিলম্বে তার শিল্প সুরক্ষা ইউনিটের অধীনে 'আইএসইউ- প্লাস্টিক' নামে একটি পৃথক ইউনিট স্থাপন করা উচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
"এই ইউনিট পুরান ঢাকার বাইরের কারখানাগুলোতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রটোকল অনুসরণ করে মান পর্যবেক্ষণ এবং পরিদর্শন করবে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের উচিত বাংলাদেশের সমস্ত প্লাস্টিক কারখানার তালিকা তৈরি করে একটি ডেটাবেস তৈরি করা। এই কারখানাগুলোকে লেবার ইন্সপেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ্লিকেশনের আওতায় একত্র করা উচিত," যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্লাস্টিক শিল্প বাংলাদেশের একটি প্রধান নন-আরএমজি খাত, যেখানে ৮৪১টি কারখানা দেশের জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ অবদান রাখে। প্লাস্টিক পণ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অভ্যন্তরীণ বাজারের উদ্দেশ্যে উৎপাদিত হলেও, ২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ২১০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, "টাকার অভাবে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যেক্তারা তাদের কারখানা প্লাস্টিক শিল্প পল্লীতে নেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সরকার ৩,৬৬০ কোটি টাকার প্রকল্প নিলে সেই টাকা আমরা ২০ থেকে ৩০ বছরের ফেরত দিয়ে দেব।"
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, "মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদীখানে বিসিক বাস্তবায়নাধীন ৩১০ একর জায়গায় কেমিক্যাল পল্লী প্রকল্পে প্লাস্টিক শিল্পনগরী করার জন্য ১০০ একর জায়গা রয়েছে। কারখানা স্থানান্তরিত করতে কীভাবে প্রকল্প তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে বিপিজিএমইএ সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে পারে।"
তিনি বলেন, "কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শন বিভাগ সঠিকভাবে কারখানা পরিদর্শন করতে পারছে না। আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি এই বিভাগকে শক্তিশালী করার; অথবা নতুন একটি ডিপার্টমেন্ট করা, যারা এগুলো দেখবে।"