বৈশ্বিক প্লাস্টিক কাঁচামালের বাজারে পা রাখলো মেঘনা গ্রুপ
নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁওয়ে পেট্রোকেমিক্যাল কারখানা চালু করেছে মেঘনা গ্রুপ। চালুর মাত্র তিন মাসে ১৫০ কোটি টাকার রপ্তানি করে আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক কাঁচামালের বাজারে প্রবেশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
"রপ্তানি ছাড়াও, আমরা এই সময়ের মধ্যে স্থানীয় বাজারে ১৫০ কোটি টাকার প্লাস্টিক কাঁচামাল বিক্রি করেছি," মেঘনা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সুমন ভৌমিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশে প্লাস্টিকের কাঁচামালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, যা আগে সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক বাজার ও আমদানির ওপর নির্ভরশীল ছিল।
তিনি বলেন, "দেশে পিইটি রেজিনের চাহিদা বছরে ২ লাখ টন। কিন্তু আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা ১ লাখ টন।"
"দেশে সবেমাত্র পিভিসি রেজিন উৎপাদন শুরু হয়েছে। আমাদের কিছু পণ্য ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়েছে এবং প্লাস্টিকের পাইপ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশে পিভিসি রেজিনের চাহিদা বছরে ৪ লাখ টনের ওপরে, তবে আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা দেড় লাখ টন, যোগ করেন সুমন ভৌমিক।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে মেঘনা ইকোনমিক জোনে (এমইজেড) প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য স্থানীয় এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। মেঘনা ইকোনমিক জোনে ৯৭ হাজার ২০৫.৪৯১ বর্গ মিটার এলাকায় পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্টটি নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর।
চলতি মাসের ১৪ তারিখ পলিভিনাইল ক্লোরাইড প্লান্টে উৎপাদন শুরু করে মেঘনা গ্রুপ। আর পলিথিন টেরেফথালেট (পিইটি) রেজিনের উৎপাদন শুরু হয় তিন মাস আগেই।
নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইলসহ অন্যান্য সেক্টরে পাইপিং এবং সাইডিং, ব্লাড ব্যাগ এবং টিউবিং থেকে শুরু করে ক্যাবল তার, উইন্ডশিল্ড সিস্টেমের উপাদানসহ আরও অনেক কিছু তৈরিতে ব্যবহৃত হয় পিভিসি।
পোশাকের ফাইবার হিসেবে, তরল পদার্থ ও খাবারের কনটেইনার তৈরিতে, উত্পাদনের ক্ষেত্রে থার্মোফর্মিং এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের ক্ষেত্রে গ্লাস ফাইবারের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয় পিইটি।
স্থানীয় বাজারে পণ্য বিক্রি ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ভারত, ইতালি এবং দুবাইতে পিইটি রেজিন রপ্তানি করেছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
প্ল্যান্টটিতে তিনটি ভিন্ন গ্রেডের পিভিসি রেজিন তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। গ্রেড তিনটি হলো- কে৫৭, যা ইনজেকশন মোল্ডেড ফিটিংসের জন্য ব্যবহৃত হয়; কে৬৭, যা শক্ত পিভিসি পাইপ, ফিল্ম ও প্রোফাইলে ব্যবহৃত হয়; এবং কে৭০, যা প্যাকেজিং ফিল্ম, ক্যালেন্ডার ফিল্ম এবং ক্যাবল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
সুমন ভৌমিক বলেন, "এখানে বেসরকারি খাতে এটিই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। আমাদের কারখানায় প্রায় ১ হাজার ৯০০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।"
"মেঘনা পিইটি'র ব্যবহৃত বারমাগ হুইটং প্রযুক্তি অন্যান্য প্রযুক্তির তুলনায় ভালো মানের পিইটি উত্পাদন করে। এছাড়া, মেঘনা পিইটি উৎপাদনের ক্ষেত্রে লিকুইড হিটিং সিস্টেম ব্যবহার করে, যার ফলে তাপ খরচ কম হয়। ইতালির ইউওপি-এসআইএনসিও থেকে উচ্চ স্তরের প্রযুক্তি এবং সলিড স্টেট পলিকনডেনসেশন প্ল্যান্ট, মেঘনা পিইটি-কে বাজারের সেরা পণ্য করে তুলেছে," বলেন সুমন ভৌমিক।
তবে মেঘনা গ্রুপের পেট্রোকেমিক্যাল কারখানাটি এর সম্পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করছে না বলে জানায় কোম্পানির সূত্র।
সুমন ভৌমিক বলেন, "পিইটি রেজিন প্ল্যান্টটি ক্ষমতার ৯০ শতাংশ ব্যবহার করছে। ভারত থেকে ৫০০ টন পিভিসি রেজিনের অর্ডার রয়েছে। শীঘ্রই আমরা আমাদের সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতায় যাবো।"
বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার
বিজনেস ওয়্যার প্রকাশিত বাংলাদেশ প্লাস্টিক মার্কেট আউটলুক ২০১৯-২০২৫ অনুসারে, কম খরচে উত্পাদন, টেকসইতা, কাঁচামালের প্রাপ্যতা এবং স্থায়িত্বের কারণে বাংলাদেশের প্লাস্টিকের বাজার বার্ষিক ৮ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে (সিএজিআর) পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ বছরে ৭ কেজি, ভারতে প্রায় ২৩ কেজি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের মতো অন্যান্য উন্নত দেশে বছরে এই পরিমাণ ১০০ কেজির বেশি। তাই এই বাজারে বিশাল প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ সালের মধ্যেই এ বাজার সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার জন্য প্রস্তুত।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "আমাদের অনেক ধরনের কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। আমরা পিইটি রেজিন এবং পিভিসি রেজিনের জন্য আমদানির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। সর্বশেষ পিভিসি রেজিন টনপ্রতি ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ ডলার দরে কিনেছি। আন্তর্জাতিক বাজারে এই দাম প্রায়ই ওঠানামা করে।"
"এই কাঁচামাল দেশে উৎপাদিত হলে, তা আমাদের ব্যবসাকে ব্যাপকভাবে লাভবান করবে। আমরা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এসব কাঁচামাল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করতে পারবো। এটি দেশের জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা," যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন টিবিএসকে বলেন, "মেঘনা গ্রুপ পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্ট খুলেছে; এটি প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এখানে উৎপাদিত কাঁচামাল দেশের অন্যান্য শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।"