ঢাকায় গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে তেজগাঁও, মতিঝিল, মিরপুর-১০ ও সায়েদাবাদে
ঢাকা শহরে গ্রীষ্মকালে তেজগাঁও শিল্প এলাকা, মতিঝিল শাপলা চত্বর, মিরপুর ১০ নম্বর এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
সেন্টার ফর এটমসফেরিক পল্যুশন স্টাডিজ (সিএপিএস) এর এই গবেষণায় দেখা যায়, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় সর্বোচ্চ ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মতিঝিল শাপলা চত্বরে ৩৫.৫, মিরপুর ১০ নম্বর এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ৩৫.০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। একইভাবে শীতকালেও এসব এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সে. রেকর্ড করা হয়।
গ্রীষ্মকালে যে ৪টি স্থানে সর্বনিম্ন ২৪ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সেগুলো হলো যথাক্রমে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, রমনা পার্ক, চিড়িয়াখানা ও বোটানিকাল গার্ডেনে। শীতকালে ৬টি স্থানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.০ ডিগ্রি সে. রেকর্ড করা হয়, জায়গাগুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, বুয়েট, পিলখানা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, রমনা পার্ক, চিড়িয়াখানা এবং বোটানিক্যাল গার্ডেনের জলাশয়ের নিকটবর্তী এলাকায়। এছাড়াও ধানমন্ডি লেকের চারপাশের তাপমাত্রাও তুলনামূলকভাবে কম পরিলক্ষিত হয়।
বুধবার (৪ অক্টোবর) সিএপিসি ও বাংলাদেশ রিসোর্স ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) যৌথভাবে 'শহরাঞ্চলে তাপমাত্র বৃদ্ধি: কারণ ও করণীয়' শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে।
বিশেষ বক্তব্যে সিএপিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে অনেক বৈশ্বিক কারণ আছে। তবে স্থানীয় কারণগুলোই মূল। তাই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি ঢাকার ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। যেমন, গাছপালা সরাসরি তাপ এবং কার্বন নিঃসরণ কমায়, তাই শহরের প্রতিটি ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগানো উচিত এবং ছাদে বাগান করা উচিত; উদ্ভিদ, মাটি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী জমির ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন উপকারী গাছ যেমন ফলদ, বনজ, ঔষধি গাছ লাগানো উচিত; উন্নয়ন প্রকল্পে গাছ অপসারণ নয় বরং গাছ স্থানান্তর অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যেমনটি উন্নত দেশগুলিতে করা হয়।
তিনি বলেন, এই প্রচণ্ড গরমের সময় ব্যস্ততম এলাকায় বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পানি ছিটানো যেতে পারে, এতে বায়ু দূষণও কমবে।
আদ্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টার বাংলাদেশের প্রধান তাপ কর্মকর্তা বুশরা আফরিন তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, উচ্চ তাপমাত্রা মানুষের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা বাড়াচ্ছে। এল নিনো আসতে থাকবে এবং পরের বছরের গ্রীষ্ম হবে এই বছরের চেয়ে বেশি কষ্টের। আমরা শহরের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করার পরিকল্পনা করছি এবং জলবায়ু অভিবাসন নিয়ে কাজ করছি। আমাদের যতটা সম্ভব মানিয়ে নিতে হবে এবং প্রশমনের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো এই জটিল প্রাকৃতিক সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগ ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমাতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম. শহিদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, এই মুহূর্তে আমরা যা করতে পারি তা হলো অভিযোজন। গাছ লাগালে হবে না, কাটা বন্ধ করতে হবে; আমাদের পুকুর তৈরি করার দরকার নেই, তবে বিদ্যমানগুলি ভরাট করতে নিরুৎসাহিত করা দরকার। এখন বাস্তবায়নের সময়।
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ইমেরিটাস অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, বিশ্বের সব মরুভূমির অক্ষাংশ বাংলাদেশের সমান। আমাদের দেশের চারপাশের নদী ও সাগরের পানি বাষ্পীভূত হয়ে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি তৈরি করে। ফলে বাংলাদেশে মরুভূমির পরিস্থিতি তৈরি হয় না। যেকোন উন্নয়ন কাজের কথা ভাবলে প্রথমে পরিবেশের কথা ভাবতে হবে।
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, বর্তমানে যেসব সৌন্দর্য বর্ধনকারী ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলোর বেশির ভাগ দেয়াল কাঁচের তৈরি যা শহরের তাপমাত্রা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। তাই প্রতিটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের আগে জনস্বাস্থ্যের কথা ভাবতে হবে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরীন আক্তার হোসেন বলেন, পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।