পদ্মাসেতু দিয়ে বাণিজ্যিক রেল চলাচল শুরু ১ নভেম্বর
উদ্বোধনের ২১ দিন পর পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা নতুন রেল লাইনে নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে বাণিজ্যিক রেল পরিচালনা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "বাণিজ্যিক রেল পরিচালনা সামনে রেখে লুপ লাইন, সিগন্যালিং ও স্টেশন বিল্ডিংয়ের কিছু অবশিষ্ট কাজ দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। তাছাড়া, ট্রেনের শিডিউল চূড়ান্ত করা, নতুন স্টেশনগুলোতে জনবলের পদায়ন ও ভাড়া নির্ধারণের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।"
কমলাপুর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮৮ কিলোমিটার নতুন রেল লাইন ১০ অক্টোবর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন নির্মাণ করা এই লাইনে আপাতত কোনো নতুন ট্রেন দেওয়া হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু সেতু, পোড়াদহ ও যশোর হয়ে খুলনা এবং বেনাপোলগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেসকে পদ্মাসেতু ও পোড়াদহ হয়ে চালানো হবে।
তাছাড়া, রাজশাহী থেকে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত চলাচলকারী মধুমতী এক্সপ্রেসের রুটের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত চালানোর প্রস্তাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী। এ হিসাবে নতুন লাইনে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে মোট তিনটি।
পদ্মাসেতুর প্রতি কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জন্য ২৫ টাকা এবং গেন্ডারিয়া-কেরানীগঞ্জ উড়াল অংশের প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৫ কিলোমিটারের ভাড়া প্রস্তাব করায় নতুন লাইনে দুরত্ব কমলেও ভাড়া কিছুটা বাড়ছে। প্রস্তাবিত এই ভাড়া কিছুটা কমানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানিয়েছেন সাহাদাত আলী।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটির আওতায় উদ্বোধন করা অংশে মোট আটটি স্টেশন থাকলেও শুরুর দিকে গেন্ডারিয়া, মাওয়া, পদ্মা, শিবচর এবং ভাঙ্গা স্টেশনে ট্রেনের যাত্রাবিরতী দেওয়া হবে। তবে গেন্ডারিয়া থেকে মাওয়া পর্যন্ত প্রায় ৩৯ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত একটি স্টেশন চালু করার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন।
তিনি বলেন, এই অংশে নিমতলা বা শ্রীনগর স্টেশন চালুর লক্ষ্যে কাজ চলছে। কিছুটা এগিয়ে থাকায় শুরুতেই নিমতলা স্টেশনকে অপারেশনাল করার সম্ভাবনা বেশি।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই লাইনে কোন ট্রেন চলবে, ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়া নির্ধারণ, জনবল পদায়নের কাজ চলছে।
পুরো প্রকল্পের সবগুলো স্টেশন পরিচালনায় ১৬৮০ নতুন জনবল লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, দেড় বছর আগে রেল থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের অনুমোদন এখনও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, কয়েকটি স্টেশনে সিগন্যালিংয়ের কাজ বাকি আছে। তাছাড়া লুপ লাইন এবং স্টেমনের আসবাবপত্র ও সাজগোজের কাজও এখনও বাকি আছে। নভেম্বরের আগেই এ সব কাজ শেষ করা হবে বলে জানান তিনি।
ট্রেন ভাড়া
বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কমলাপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনের শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৫৫ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৭৯ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই ভাড়া একই পথের বাসের ভাড়ার চাইতে অনেক বেশি।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রকৃত দুরত্ব ৮২.৩ কিলোমিটার হলেও সেতু এবং এলিভেটেড লাইনের জন্য ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৫৯ কিলোমিটারের।
প্রস্তাবে আরও দেখা গেছে, ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত নতুন লাইনে ৩৯৩.৩ কিলোমিটার দুরত্বের জন্য ৬৭০ কিলোমিটারের ভাড়া আদায় করা হবে। এই অংশে শোভন চেয়ারের জন্য ৬১৫ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে যমুনা সেতু হয়ে চলাচল করতে ঢাকা থেকে খুলনায় শোভন চেয়ারের ভাড়া ধরা আছে ৫০৫ টাকা। এ হিসাবে সেতু হয়ে রেল সেবা চালু হলে ঢাকা থেকে খুলনার ভাড়া ১১০ টাকা বা ২২ শতাংশ বাড়বে।
একই গন্তব্যে পদ্মাসেতু হয়ে এসি চেয়ারের প্রস্তাবিত ভাড়া ১,১৭৩ টাকা; যদিও বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে এই ভাড়া ৯৬৬ টাকা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নতুন লাইনটিতে চলাচলকারী ট্রেনগুলো পদ্মা সেতু, ভাঙ্গা জংশন হয়ে পোড়াদহ স্টেশন থেকে পুরাতন লাইন হয়ে গন্তব্যে চলে যাবে। ঢাকা থেকে যমুনা সেতু হয়ে পোড়াদহ পর্যন্ত বর্তমানে ৩৬০ টাকা ভাড়ার বিপরীতে পদ্মাসেতু হয়ে ভাড়া ধরা হয়েছে ৪৭০ টাকা। এই গন্তব্যে শোভন চেয়ারের ভাড়া ১১০ টাকা বা ৩১ শতাংশ বাড়ছে। একই হারে এসি চেয়ার এবং এসি সিটের ভাড়াও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ভাঙ্গা জংশন থেকে যশোর পর্যন্ত আরও ৮৮ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ শেষ করে আগামী বছরের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর ও খুলনার দুরত্ব আরও কিছুটা কমাতে চায় রেলওয়ে। ওই অংশের কাজ শেষ হলে খুলনা ও যশোরের ভাড়া বিদ্যমান ভাড়ার চাইতে শ্রেণিভেদে ২৫ থেকে ৫২ টাকা কমে আসবে।
এ বিষয়ে সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ট্রেন চালুর আগে প্রস্তাবিত ভাড়া যাচাই-বাছাই করে সমন্বয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। এ বিষয়ে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
সব মিলে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে সেপ্টেম্বর মাসে ৯৭.৫০ শতাংশ ও ঢাকা-মাওয়া অংশে ৮৩ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ডিজি কামরুল আহসান টিবিএসকে বলেন, "নভেম্বরের প্রথম দিনে বাণিজ্যিক অপারেশন শুরুর লক্ষ্য সামনে রেখে লাইনটি শতভাগ প্রস্তুত করতে অবশিষ্ট কাজ দ্রুতগতিতে শেষ করা হচ্ছে।"