সরকার পতনে ঢাকা অবরোধের পরিকল্পনা বিএনপি-জামায়াতের
সরকার পতনে চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকা অবরোধ করতে যাচ্ছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী সহ সরকার বিরোধী সব দল। আজ বুধবার বিএনপির সমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের ৭ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয়ার ঘোষণা আসতে পারে।
এসময়ে দাবি না মানলে পূজার ছুটির পর '২৬ তারিখ থেকে নভম্বরের প্রথম সপ্তাহে সম্ভাব্য তফসিল ঘোষণা পযন্ত' সময়টাতে সর্বাত্মক আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়ে এগাচ্ছে দলগুলো, বিএনপি-জামায়াত সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিএনপি-জামায়াত সূত্র জানায়, ৭ দিনের সময়সীমার মধ্যে সরকার পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না পূরণ করলে পূজার পর সমাবেশের মাধ্যমে অবরোধ, ঘেরাও, অবস্থান ধর্মঘট সহ হরতালের মতো কর্মসূচি দেবে বিএনপি। আন্দোলন হবে ঢাকাকে কেন্দ্র করে, তবে প্রশাসনকে ব্যস্ত রাখতে ঢাকার বাইরেও জেলাতে কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। পূজার পর থেকে বিএনপি-জামায়াত এক হয়ে অভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামছে।
একই সময় একই স্থানে কর্মসূচি দিবে উভয় দল, পাশাপাশি যুগপৎ অন্যান্য ছোট দলগুলোও। বিএনপির লক্ষ্যমাত্রা কমপক্ষে ১০ লাখ লোক ঢাকায় জড়ো করা। অপরদিকে জামায়াতেরও ৮-১০ লাখ লোক নিয়ে ঢাকা ঘেরাও করার পরিকল্পনা রয়েছে । সবগুলো দল মিলিয়ে ২০ লাখ লোক রাজধানীতে জড়ো করার প্রথমিক ছকে এগাচ্ছে দলগুলো।
সূত্র জানায়, এবারের চূড়ান্ত কর্মসূচি হবে পুরো ঢাকাজুড়ে। বিশেষ করে ঢাকার প্রবেশদ্বার সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো দখলের চেষ্টা থাকবে আন্দোলনকারীদের। কর্মসূচিতে রাজধানীর চার প্রবেশমুখে উত্তরা-গাবতলী এবং সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী এলাকায় থাকবে কয়েক লাখ নেতাকর্মী।
মহাখালী-ফার্মগেট-শাহবাগ-নয়াপল্টন এলাকায়ও ভাগ ভাগ করে নামানো হবে কয়েক লাখ নেতাকর্মী।
আদালত-সচিবালয়-প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে থাকবে সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মী। ঢাকার অন্যান্য এলাকায় আওয়ামী লীগকে হাটিয়ে রাজপথ দখলে নিয়ে পরে সব নেতাকর্মীরা আসতে থাকবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও বাসভবনের চারপাশে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সারাদেশের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ২৬ তারিখের মধ্যে ঢাকায় আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে; ঢাকায় ১৫ দিন থাকার মতো মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে আসতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিএনপি দক্ষিণ জেলা বিএনপি সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন বলেন, 'কেন্দ্র থেকে সকল নির্দেশনা দিয়েছে আমাদের, স্থানীয় নেতারা সকল ধরণের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে নিয়েছে, এখন ঢাকা থেকে সাংগঠনিক ডাকের অপেক্ষায় আছি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী টিবিএসকে বলেন, "আমরা আন্দোলনের একদম শেষ পর্যায়ে এসেছি। চূড়ান্ত আন্দোলন এখনও চলছে, তবে এর ফসল তোলার তারিখ অল্প কিছুদিনের মধ্যে দৃশ্যমান হবে।"
জামায়াত সূত্রে জানা যায়, ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকে সক্ষমতা অনুযায়ী ২০ থেকে ৩০ হাজার করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের কিছু অংশ জেলাতেও রাখা হবে বলে যাতে প্রশাসনকে ব্যস্ত রাখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামির এক সিনিয়র নেতা টিবিএসকে জানান, জামায়াতের টার্গেট ৮ থেকে ১০ লাখ শুধু ঢাকায় জড়ো করে 'মহাসমাবেশ' করা। এই মহাসমাবেশ হবে পূজার পরে।
জামায়াতে ইসলামির সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আবদুল হালিম টিবিএসকে বলেন, "জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক অসহিংস শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে এবং সেই আন্দোলন আরো জোরদার করবে। আশা করি আমাদের এই আন্দোলন খুব তাড়াতাড়ি সবরকার পতনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হতে যাচ্ছে।"
বিএনপি-জামায়াত সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য হামলার স্থান ও নেতাদের কথাও মাথায় রাখা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমন্ডি, গুলিস্তান ইত্যাদি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে হামলার মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগে 'ক্যাডার পলিটিক্স' করে-এমন নেতাদের উপরও নজরদারি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে-যেন সম্ভাব্য হামলার আগেই তথ্যে শতভাগ নির্ভুল থাকা যায়।
বিএনপি-জামায়াত সূত্র জানায়, আন্দোলন শুরু হলে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বের সমর্থন আরো বাড়বে, অপরদিকে সরকার কূটনৈতিকভাবে আরো বড় ধরনের ধাক্কা খাবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গণমাধ্যমকে বলেছেন, "নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।"
সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর নতুন গঠিত আইন সভার প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এবং ২৯ অক্টোবর চলমান এই সংসদের শেষ দিন হবে।
চলতি একাদশ সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার (২৯ জানুয়ারি) আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে এই ৯০ দিন গণনা শুরু হবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে 'যাবতীয় কার্যক্রম শেষ ধাপে' জানিয়ে নভেম্বরেই তফসিল ঘোষণার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো.আলমগীর।
এদিকে গত ১৬ অক্টোবর যুব সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "বিএনপি যে লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে সেখান থেকে আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। কথা একটাই, আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি। অনেক মা সন্তান হারিয়েছেন। আর এ সরকাকে ক্ষমতায় রাখা যাবে না।"
মির্জা ফখরুল বলেন, "আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চূড়ান্ত লড়াই শুরু হবে। এখন একটাই লক্ষ্য সরকারের পতন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো হবে।"
বিএনপির দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, "দুর্গাপূজার ছুটি শেষে যেকোনো দিন থেকে সরকার পতনের লাগাতার কর্মসূচি পালন শুরু হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান টিবিএসকে বলেন, "সরকারের পতন ঘটানোর জন্য শীঘ্রই সর্বাত্মক আন্দোলনে জনগণ মাঠে নামছে। এটা পূজার পর দেখতে পাবেন। হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও সবই দেখতে পারবেন।"