তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন জোরদারের পরিকল্পনা, ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার চিন্তা
তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকে প্রতিহত করার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চলমান আন্দোলন আরো জোরদার করার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি-জামায়াত।
বিএনপি-জামায়াত সূত্রে জানা যায়, তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকেই সারাদেশে লাগাতার হরতাল-অসহযোগ আন্দোলনের পরিকল্পনা তাদের। পাশাপাশি ঢাকাকে অচল করার জন্য রাজধানীর প্রবেশপথগুলোকে অবরোধ করে পুরোপুরি সারাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করারও চিন্তা রয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে আবারও সারাদেশ থেকে নেতাকর্মী এনে ঢাকায় জড়ো করার; যেকোন মূল্যে নির্বাচনকে ঠোকানোর জন্য ইসি ভবন ঘেরাওয়েরও পরিকল্পনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকার বিরোধী দলগুলোর এখন প্রধান টার্গেট নির্বাচন প্রতিহত করা, আর সেই টার্গেট অনুযায়ী ইসি ভবন ঘেরাওকে গুরুত্ব দিচ্ছে সর্বোচ্চ। এছাড়াও বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার বিরোধী সকল দলের একই ব্যানারে এসে আন্দোলন জোরদার করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে (১৪ নভেম্বর) মঙ্গলবার একদিন বিরতি দিয়ে আগামী বুধবার থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত পঞ্চম দফায় আবার ৪৮ ঘণ্টার টানা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি-জামায়াত সহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথে অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে তারা।
বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানায়, যদিও প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ঠেকানো যায়নি, তারপরও গত ২৮ অক্টোবর থেকে সরকারের এত বেশি ক্র্যাকডাউনের পরেও সারাদেশে নেতাকর্মীরা হরতাল-অবরোধ পালন করছে, এবং হামলা-মামলার ভয়কে উপেক্ষা করে দিনদিন আন্দোলনে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও বাড়ছে। ২৮ অক্টোবরে ছত্রভঙ্গের পর আবারও ছন্দে ফিরে আন্দোলন অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
এর আগেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন কে প্রতিহত করার জন্য দেশব্যাপী আন্দোলন করে বিএনপি-জামায়াত। তখন সারাদেশে পুলিশের সাথে ব্যাপক সহিংসতা হয়। সে নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত বর্জন করায় ৫ জানুয়ারির আগেই সারাদেশে আওয়ামী লীগের ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়। তখন সরকারবিরোধীদের আন্দোলন সফল না হলেও হরতাল-অবরোধে প্রায় ৩ মাস রাজধানী ঢাকা সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল।
গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে সারাদেশে বিএনপির প্রায় ১২ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এক সাংবাদিকসহ ১৩ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে।
পাশাপাশি পুরনো মিত্র জামায়াতে ইসলামীরও গত ২৮ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩ জন নিহত ও ২ হাজারের অধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দ্য বিজনেস স্টাডার্ডকে বলেন, "এবার আমাদের আন্দোলন 'ডু অর ডাই' এবং অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন। আমাদের সামনে দুই পথ খোলা, একটি হলো কারাগার, অন্যটি রাজপথ। তবে এবার আমরা চলমান আন্দোলনে বিজয়ে হাতছানি দেখতে পাচ্ছি। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। আমাদের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সরকার পতন হবে।"
এদিকে সমঝোতা ছাড়াই নির্বাচন কমিশন একতরফা তফসিল ঘোষণা করতে চাইলে তফসিল ঘোষণার দিন ঢাকায় নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করার কর্মসূচি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
গত রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
এছাড়াও 'দেশের স্বার্থে' নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানিয়েছে পাঁচ দলীয় রাজনৈতিক মোর্চা 'সমমনা ইসলামি দলসমূহ'। গত ১০ নভেম্বর সমমনা ইসলামি দলসমূহের এক বৈঠকে এই অভিমত জানানো হয়।
পাঁচ-দলীয় রাজনৈতিক মোর্চার শরিক দলগুলো হলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, মুসলিম লীগ (বদরুদ্দোজা আহমেদ-কাজী আবুল খায়ের) ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।
দলগুলো বলেছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি উপেক্ষা ও অবজ্ঞা করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হতে পারে।