বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন ঘিরে চট্টগ্রামে উৎসবের আমেজ, যান চলাচলে বিধিনিষেধ
কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরকে কেন্দ্র করে নদীর দুই পাড় সেজেছে বর্ণিল সাজে। সড়কের দুই পাশে লাগানো হয়েছে শত শত জাতীয় পতাকা। নদীর দুই পাড়ের সড়কগুলো পরিষ্কার করে রাঙানো হয়েছে নানা রঙে। ভাঙা সড়কগুলোকে মেরামত করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরী ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সব উপজেলায় দিনভর মাইকিং করে চালানো হচ্ছে প্রচারণা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে জায়ান্ট স্ক্রিনে প্রচার করা হচ্ছে টানেলসহ বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভিডিও চিত্র।
এদিকে টানেল নির্মাণ ও উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর পোস্টর ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে নগর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রায় সবগুলো সড়ক।
অনুষ্ঠান সূচি অনুযায়ী শনিবার (২৮ অক্টোবর) সকালে নগরীর পতেঙ্গায় টানেলের নামফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর টোল প্রদান করে টানেল পার হয়ে আনোয়ারা প্রান্তে কাফকো কলোনি সংলগ্ন কেইপিজেডের ৯ লাখ বর্গফুটের বিশাল মাঠে জনসভায় যোগ দিবেন তিনি।
সেই মাঠের একপাশে তৈরী করা হচ্ছে লাল-সবুজে রাঙানো নৌকার আদলে তৈরী ১৩৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪৮ ফুট প্রস্থের বিশালাকৃতির মঞ্চ। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি এটি এ যাবৎকালে নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় মঞ্চ।
টানেল উদ্বোধন ও প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে। টানেল ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ায় ব্যবসায়ীরাও খুশি।
আনোয়ারা এলাকার চৌমুহনী মোড়ে সমাহার কেন্টিন নামে এক রেস্টুরেন্টের মালিক কলিম উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এই এলাকায় একের পর এক শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে থাকে। আগে দিনে ১০০-১৫০ গ্রাহক আমার দোকানে খাবার খেতে আসতো। এখন দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাহক ভিড় করে আমার দোকানে।
এদিকে, জনসভা সফল করতে রাত-দিন কাজ করছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, টানেল উদ্বোধনকে ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ আবেগ আপ্লুত। এখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং চটগ্রাম মহানগর থেকে অন্তত ১০ লাখ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিবে বলে আশা করছি আমরা। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী টানেল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে পতেঙ্গায় টানেল উৎসবের উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
টানেল উৎসবের উদ্যোক্তা মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক, নগর আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, এই টানেল উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে উৎসব মুখর করতে 'আমরা জয়ের উদ্যোগে' শিরোনামে দুই দিনব্যাপী টানেল উৎসবের আয়োজন করেছি। বুধবার বিকাল ৩ টায় সি–বিচের মূল পয়েন্টে টানেল উৎসবের ১ম দিনে বর্ণাঢ্য র্যালি, সাগরে লাল সবুজের আলোর মেলা, পিঠা উৎসব ও চাটগাঁইয়া সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজকেও চলমান থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা অয়োজন।
যান চলাচলে বিধিনিষেধ
টানেল উদ্বোধন ঘিরে কয়েকটি সড়কে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এ গণবিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন সড়ক ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে বিমানবন্দর, টানেল ও সি-বিচ এলাকার সড়কে ভিভিআইপিরা চলাচল করবেন। এ কারণে ২৮ অক্টোবর ভোর ৫টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
এছাড়া শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে পতেঙ্গা সৈকত এলাকায়ও কোনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবে না বলে নির্দেশনায় জানানো হয়।
নির্দেশনা অনুযায়ী শনিবার ভোর ৫টা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং-কাঠগড় হয়ে কোনো যানবাহন সি-বিচ বা বিমানবন্দরে যেতে পারবে না। বিমানবন্দরগামী জনসাধারণকে এ সময় সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বাম দিকে মোড় নিয়ে বোটক্লাব হয়ে যাতায়াত করতে হবে।
এছাড়া, বিমানবন্দর মোড় অতিক্রম করে বাটারফ্লাই পার্ক হয়ে টানেল ও সি-বিচ এলাকায় যাতায়াত করা যাবে না।
একই সময়ে ফৌজদারহাট আউটার লিংক রোডে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে বলেও নির্দেশনায় জানানো হয়েছে। এ সড়ক ব্যবহারকারী এবং বন্দরগামী যানবাহনগুলো সিটি গেইট-একে খান-সাগরিকা রোড ক্রসিং-বড়পুল-নিমতলা হয়ে চলাচল করবে।