রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে পরিবহন সংকট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
রাজধানীতে আজ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে ঘিরে নাশকতার আশঙ্কায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছেন অনেকে।
যে গাড়িগুলো চলছে, সেগুলোতে যাত্রীদের অস্বাভাবিক চাপ লক্ষ্য করা গেছে। আর এ সুযোগে দ্বিগুণ-তিনগুণেরও বেশি ভাড়া হাঁকাচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো।
এ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী সাধারণ যাত্রীরা। শনিবার সকাল ১০ টায় কল্যানপুর বাস টার্মিনাল এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়।
এছাড়া রাজধানীর তাজউদ্দিন রোডে মহাখালী, সাত রাস্তা, মগবাজার মোড় এলাকায় সকাল থেকে গণপরিবহণের চলাচল কার্যত বন্ধ রয়েছে। আর বিজয়স্মরণী, ফার্মগেইট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ও শাহবাগ হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে গণপরিবহনের সংখ্যা একেবারেই কম।
সকাল ১০টা থেকে ফার্মগেইট মোড়ে আধাঘন্টা অবস্থান করে ১৭টি বাসকে দক্ষিণ দিকে চলে যেতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ১০টি বিআরটিসির ও ৩টি ট্রাস্টি পরিবহনের বাস। এর বাইরে মিরপুর থেকে আসা শিকর পরিবহণ, টঙ্গী থেকে আসা বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহনের কয়েকটি বাস চলতে দেখা গেছে।
রাস্তায় স্বাভাবিকের চাইতে লোকজন কম থাকলেও বাসের পরিমাণ আরও কম থাকায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। লম্বা সময় অপেক্ষা করেও অনেকে বাসে উঠতে পারছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা বা মোটর সাইকেলে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেকে।
এদিকে, রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে। বেশ কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদেরও অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) পিযুষ কুমার সরকারের নেতৃত্বে সাত রাস্তা মোড়ে অবস্থান করছে পুলিশের একটি দল।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকাল থেকে তেজগাঁও এলাকায় কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। জনগণের নিরাপত্তায় পুলিশ কাজ করছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, "কারও গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে তাকে তল্লাশি করা হচ্ছে। অযথা কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।"
এদিকে, রাজধানীর মগবাজার এলাকায় বেশ লম্বা সময় ধরে কোনো ধরনের যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। এলাকটিতে যানবাহনের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীও তেমন দেখা যায়নি। তবে ফার্মগেইটের পাশাপাশি কারওয়ান বাজার ও বাংলামোটর এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে। কোনো বাস এসে দাঁড়ালেই যাত্রীরা বাসে উঠতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।
অন্যদিকে, রাজধানীর প্রবেশপথ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা ও আরিচামুখী উভয় লেনেই খুব সংখ্যক যানবাহন চলছে।
গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিকাংশ বাস বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশের কারণে রিজার্ভ নেওয়ায় সড়কে অন্যান্য দিনের তুলনায় পরিবহনের সংখ্যা কম।
সকালে হারুনর রশীদ নামে হেমায়েতপুর আলমনগর হাউজিং এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষারত ঢাকাগামী একজন যাত্রী বলেন, "আমার অফিস শ্যামলীতে। কিন্তু এক ঘন্টা যাবত কোন বাস পাচ্ছি না। যাও দুই-একটা আসে, তাতে দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও নেই।"
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষারত আরিফা হক নামে ঢাকাগামী এক যাত্রী বলেন, "আধাঘন্টা যাবত দাঁড়িয়ে আছি; বাস নেই। কোনো লেগুনা পেলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ঢাকায় যাবো।"
উলাইল এলাকার সাইফুল ইসলাম নামে এক পোশাক শ্রমিক টিবিএসকে বলেন, "আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করি। অন্যান্য দিন বাস করে ফ্যাক্টরিতে যাই। আজ বাস পাচ্ছি না, লেগুনার জন্য অপেক্ষা করছি। লেগুনা ছাড়া আজ আর কোনো পথ নেই। আবার কারখানায় পৌঁছাতে দেরি হলেও সমস্যা।"
যোগাযোগ করলে আশুলিয়ার নন্দনপার্ক থেকে সদরঘাট রুটে চলাচলকারী সাভার পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহেল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পরিবহন বন্ধ নেই। তবে যেখানে আমাদের প্রতিদিন ১৪০ থেকে ১৫০টি বাস এই রুটে চলাচল করে, সেখানে আজ মাত্র ৪০টি বাস চলছে। বাকি গাড়িগুলো সব সমাবেশের জন্য রিজার্ভ নিয়ে গিয়েছে; এ কারণে সড়কে এমন পরিবহন সংকট।"
"আর শুধু সাভার পরিবহন নয়, সব পরিবহনে একই অবস্থা। এই সড়কে চলাচলরত বাসের প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগই
সমাবেশের জন্য রিজার্ভে রয়েছে, ফলে অল্প সংখ্যক বাস নিয়মিত রুটে চলাচল করছে," যোগ করেন তিনি।
আজ দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ এবং বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশের আয়োজন করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
এর আগে, ২০ শর্ত মেনে শনিবার রাজধানীতে নিজেদের পছন্দের জায়গাতে সমাবেশের অনুমতি পায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। নয়াপল্টনে বিএনপিকে এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ক্ষমসীন দল আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ।