ডিসি, ইউএনওদের জন্য ২৬১ গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত স্থগিত
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন গাড়ি পাচ্ছেন না জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে ৬১ জন ডিসি ও ২০০ জন ইউএনওর জন্য ২৬১টি নতুন জিপ কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।
এর আগে, গত ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব গাড়ি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
সোমবার (৬ নভেম্বর) অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান।
তিনি বলেন, "অবশেষে এসব গাড়ি কেনা হচ্ছে না। এটি স্থগিত করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও সরকারের কৃচ্ছ্রতাসাধন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থ সচিব ড. মো: খায়েরুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনের সময় সাধারণত ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সংশ্লিষ্ট আসনে নির্বাচনের সব দায়িত্ব ও ক্ষমতা মূলত তাদের হাতে থাকে। এই কর্মকর্তাদের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি) বা জিপ কেনার প্রস্তাব করা হয়।
'মিতসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউ এক্স' মডেলের প্রতিটি গাড়ির দাম ধরা হয়েছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা। ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দরপত্র ছাড়া সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে গাড়িগুলো কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছিলো।
এ সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা এর সমালোচনা করে বলেন, এমন সময়ে গাড়িগুলো কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যখন সরকার টাকার সংকটে রয়েছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে বিদ্যুৎ ও সারের ভর্তুকি টাকা যথাসময়ে ছাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। ডলার সংকটে বিদেশ থেকে আসা বিদ্যুতের দাম বকেয়া থাকছে। গ্যাস ও জ্বালানি তেলের বিদেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পাওনাও সময়মত পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এরকম সময়ে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তকে 'রাজনৈতিক' ও 'বিলাসী' বলে উল্লেখ করেন অনেকে।
একইভাবে অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠানের গাড়ি কেনার প্রস্তাব বিশেষ বিবেচনায় অনুমোদন করা হয়েছিল সেগুলোও স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ২৫ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে মিনি ট্রাক এবং ওয়াটার বাউজার ৩১টি ভারী যানবাহন কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এ নিয়ে অর্থ বিভাগ আপত্তি তুললে পরে স্থানীয় সরকার বিভাগই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে দেওয়া অনুমোদন বাতিল করেছে।
জানা গেছে, অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান বিশেষ বিবেচনায় গাড়ি কেনার অনুমোদন চেয়ে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে সেগুলো অনুমোদন দেওয়া হবে না। ১১ সেপ্টেম্বর নতুন গাড়ি কেনার জন্য ২০ কোটি টাকা চেয়ে অর্থ বিভাগকে চিঠি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের জন্য নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব করে সংস্থাটি। এছাড়া বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা প্রতিষ্ঠান, খুলনা সিটি কর্পোরেশন, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এক বা একাধিক গাড়ি কেনার প্রস্তাব করেছে। কিন্তু অর্থ বিভাগ কোনো প্রস্তাবই এখন আর অনুমোদন করবে না বলে জানা গেছে।
গত ২ জুলাই সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের যানবাহন ক্রয় (মোটরযান, জলযান, আকাশযান) বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশনা জারি করা হয়। একইসঙ্গে পরিচালন বাজেটের আওতায় মোটরযান, জলযান, আকাশযান খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।
যদিও ওই পরিপত্রে বলা হয়, '১০ বছরের বেশি পুরোনো মোটরযান প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করার সুযোগ রয়েছে।' সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার পিছিয়ে এসেছে।