ন্যূনতম মজুরির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনগুলোর
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/11/07/garments-bg-20231107121326.jpg)
তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য মালিকপক্ষের প্রস্তাব করা ১২ হাজার ৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরিই চূড়ান্ত করেছে নিম্নতম মজুরি বোর্ড, যা শ্রমিকদের দাবির প্রায় অর্ধেক। এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে মজুরি বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন পোশাক শ্রমিক সংগঠন।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনও মজুরি বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ করেছে। সংগঠনের সমন্বয়ক তসলিমা আখতার ঘোষিত মজুরিকে 'প্রসহন' আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যানের কথা জানান।
'শ্রমিকরা এই মজুরি প্রস্তাব মেনে নেবে না'- উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি (সিরাজুল ইসলাম রনি) মালিক ও সরকার – সবাই শ্রমিকদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারা শ্রমিকদের মানুষ মনে করে না। যদি মনে করতো, তাহলে এই ধরনের প্রস্তাব করতে পারতো না।'
তিনি ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা মজুরির দাবি জানান।
সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার টিবিএসকে বলেন, 'এই মজুরি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এটা প্রত্যাখ্যান করছি। একইসঙ্গে, নতুন করে মজুরি নির্ধারণের দাবি জানাই।'
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে যখন মজুরি ঘোষণা করা হয়, ডলারের বিনিময় দরে তখন সেটা ৯৫ ডলার ছিল। নতুন করে বাড়ার পর তা হচ্ছে ১১৩ ডলার। তাহলে ডলারের হিসাবে মজুরি তো তেমন বাড়েনি।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন- এর সভাপতি মো. তৌহিদুর রহমান এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'দ্রব্যমূল্য যেভাবে বাড়ছে, তাতে এ মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হবে।'
নতুন নির্ধারিত নুন্যতম মজুরির বিষয়ে সাধারণ শ্রমিকদের প্রতিক্রিয়া।
মঙ্গলবার মজুরি বোর্ডের নতুন নূন্যতম মজুরি ঘোষণার পর সাভারের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০ জন পোশাক শ্রমিকের সাথে কথা বলেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
শ্রমিকরা বলছেন, নতুন নির্ধারিত নূন্যতম মজুরিতে খুশি নন তারা, তা ছাড়া এতে তাদের প্রত্যাশার প্রতিফলনও ঘটেনি। তবে আগের তুলনায় নতুন মজুরি তাদের টিকে থাকার জন্য কিছুটা সহায়ক হবে। তবে এক্ষেত্রে নূন্যতম এই মজুরির পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও বাসা ভাড়ার ওপর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ চান তারা।
নতুন নির্ধারিত নূন্যতম মজুরি প্রসঙ্গে সাভারের জে কে গার্মেন্টস এর সুইং অপারেটর শিপলা আক্তার রুবি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, 'সাড়ে ১২ হাজার টাকায় খুশি হওয়ার কোন কারণ নাই। এক আঁটি শাক কিনতেও এখন ২০ টাকা লাগে। পেঁয়াজের কেজি ১৬০/১৭০ টাকা। এক কেজি পেঁয়াজে তো আর মাস চলে না। অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও আপনাদের জানা। অন্তত ২০ হাজার টাকা দরকার এই বাজারে বেঁচে থাকার জন্য।'
একই কথা বলেন তার সহকর্মী মুন্নি আক্তার।
সাভারের আনলিমা টেক্সটাইল লি. এর শ্রমিক মোখলেছুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, আশা করেছিলাম, অন্তত ১৪ বা ১৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হবে। কেননা বর্তমানে জিনিসপত্রের যেই দাম, তাতে শ্রমিকদের জন্য টিকে থাকা খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, 'সাড়ে ১২ হাজার টাকাতেও চলা যেত– যদি দ্রব্যমূল্যের দাম কম থাকতো। এখন এই মজুরি দিলে দ্রব্যমূল্য ও বাসা ভাড়া নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিতে সরকারকে। তা নাহলে আমরা এর কোন সুফল পাব না। ২০/২৫ টাকার আলু বর্তমানে ৬০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়, বাচ্চাদের একটা নাপা সিরাপের দাম ৩৫ টাকা, বছর খানেক আগেও যা ২০ টাকা ছিল।'
দীর্ঘ ৫ বছর যাবত পোশাক খাতে চাকুরি করা এই কর্মী বর্তমানে বেতন পান ১০ হাজার ৯৬৫ টাকা।
প্রায় একইরকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন একই প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মী মো. মানিক হোসেন।
নাজমীন আক্তার নামে হেমায়েতপুরের দক্ষিণ শ্যামপুর এলাকার ম্যানভিল স্টাইলস লিমিটেডের একজন শ্রমিক বলেন, 'শুনেছি সাড়ে ১২ হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে মজুরি। কিন্তু, জিনিসপত্রের দাম না কমালে এই টাকায় কি চলা যাবে, না কোন পরিবর্তন আসবে?'
তিনি বলেন, 'যখন ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি ছিল, তখন বাসা ভাড়া ও জিনিসপত্রের যে দাম ছিল, এখনকার তুলনায় তাতে আকাশ-পাতাল তফাৎ। মজুরি শুধু বাড়ালেই হবে না, জিনিপত্রের দামও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাহলে আমরা মোটামুটি বাঁচতে পারব।'
এসময় তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, আজ নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে, খুব শীঘ্রই দেখবেন বাসা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বাড়িওয়ালারা। তাহলে তো আর কোন লাভ হলো না, বাসা ভাড়াটাও নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের একটি কারখানার একজন অপারেটর বলেন, 'যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে খুব বেশি লাভবান হবো না আমরা, এ যেন– যেই লাউ, সেই কদু। বাসা ভাড়া বাড়বে, জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে। তবে হ্যাঁ, মজুরি যদি অন্তত ১৫ হাজার টাকা হতো এবং দ্রব্যমূল্যের দাম ও বাসা ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা যেতো, তাহলে মোটামুটি চলা যেত।'
তিনি বলেন, বর্তমানে আমি ১০ হাজার টাকার কিছু বেশি পাই। আমার হয়তো বেতন বেড়ে ১৩/১৪ হাজার টাকা হবে। বাসা ভাড়া এখন দেই সাড়ে ৪ হাজার, সামনে দেখা গেল এটা ৬ হাজার টাকা হয়ে গেলো। আর বাজারে জিনিসপত্রের দামের যে আগুন, তাতে সামান্য মজুরি বাড়ালে– আমাদের সমস্যা দূর হবে না।