গাজীপুরে পোশাক কারখানায় ভাঙচুর: ১৭ মামলায় আসামি ১২ হাজার
বেতন বাড়ানোর দাবিতে গত ২৩ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যে গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিক পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১২ হাজারের বেশি লোককে।
মামলাগুলোর ৪টিতে বাদী হয়েছে পুলিশ এবং বাকিগুলোতে বাদী হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ।
মামলায় অজ্ঞাতনামা ১২ হাজারের বেশি আসামিদের মধ্যে অধিকাংশই পোশাক শ্রমিক।
রোববার (১২ নভেম্বর) গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি উত্তর-মিডিয়া) মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, এসব মামলায় এজাহার নামীয় আসামির সংখ্যা ১০৭ জন এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২২ জনকে।
তিনি জানান, বেতন বৃদ্ধির জন্য শ্রমিকদের আন্দোলন শুরুর পর থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত গাজীপুর মহানগরীর কয়েকটি শিল্প এলাকায় বিভিন্ন কারখানায় হামলা, ভাঙচুর, কারখানা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও একটি কারখানায় দেওয়া আগুনে পুড়ে একজন শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার পক্ষ থেকে ১৭ মামলা দায়ের করা
হয়েছে।
রুজু হওয়া এসব মামলায় এজাহারে নাম উল্লেখ আছে ১০৭ জনের। শনিবার রাত পর্যন্ত এসব মামলায় মোট ১২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, "এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি।"
এদিকে, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সর্বশেষ মামলাটি দায়ের হয়েছে কোনাবাড়ী থানায়। গেল শনিবার রাতে কোনাবাড়ী থানাধীন তুসুকা কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের তুসুকা গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এডমিন) আবু সাঈদ।
মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরের বিরতীর পর বহিরাগত প্রায় দুই শতাধিক দুষ্কৃতকারী তুসুকার ভিতরে কাজ চলাকালে কারখানায় প্রবেশ করে। পরে বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা কারখানার শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে সবকটি ফ্লোরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
এজহারে বলা হয়, এ সময় কারখানার কর্মকর্তাদেরও মারধর করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন। এছাড়া, কারখানার বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। একইসঙ্গে, কারখানা থেকে নগদ প্রায় আট লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা।
তুসুকা গ্রুপের পরিচালক মো. তারিক হাসান জানান, কারখানায় ভিতরে স্থাপিত বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ২৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, "শনাক্ত হওয়া সবাই তুসুকার কর্মরত শ্রমিক। এজন্য মামলায় শনাক্ত হওয়া সকলকে এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে।"
কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত অন্যদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ এজাহার দিতে দেরি করায় মামলা দেরিতে রুজু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, "তুসুকার সামনে পুলিশের যানবাহন ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার ২৪ জনকেও তুসুকার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।"
এই দুই কর্মকর্তা আরও জানান, শ্রমিকরা আন্দোলনের নামে বিভিন্ন কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িয়েছে। এসময় জানমাল, সম্পদ রক্ষায় ও পুলিশ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর ও ব্যবহৃত পিকআপে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় ১০ জনের মতো পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় কোনাবাড়ী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে যে ৪টি মামলা দায়ের করেছে, তাতে অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার।
যদিও একটি সূত্রের দাবি, গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া ১৭টি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। মামলার পর থেকে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৩ অক্টোবর থেকে বেতন বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পোশাক শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর গত ৭ নভেম্বর ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার গাজীপুর মহানগরীর কয়েকটি এলাকায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের সময় বিভিন্ন কারখানা, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, মহাসড়ক অবরোধ, শ্রমিক-পুলিশ পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় গত বুধবার নিহত হন এক নারী পোশাক শ্রমিক; আরেকজন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।