জাতীয় নির্বাচনের নতুন তফসিল ঘোষণার আহ্বান
দেশে আবারও একতরফা বা সাজানো নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে এমন উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানের বক্তারা। তাই বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচনের নতুন তফসিল দেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।
'আবারও সাজানো নির্বাচন: নাগরিক উৎকণ্ঠা' শীর্ষক আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর পান্থপথে দৃক পাঠ ভবনে।
এ আলোচনা সভার বক্তারা বলেন, সরকারের দায়িত্ব নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। কিন্তু সরকার নির্বিচার মামলা, গ্রেপ্তার ও সাজা দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগ রুদ্ধ করছে।
আলোচকরা মনে করেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক না হলে গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। তাই বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের নতুন তফসিল দেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।
আলোচনায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুসারে ডিসেম্বরের শেষ দিকে সংসদ ভেঙে দিলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ রয়েছে। তাঁর মতে, 'সিরিয়ার আসাদ মডেল' অনুসরণ করে এদেশে বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করা হচ্ছে, যা কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানান।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, এখন যে নির্বাচনের পরিকল্পনা হচ্ছে, তা শুধু নিয়ন্ত্রিত বা সাজানো নয়, তা একতরফা নির্বাচন। সঠিক ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের যথার্থ বিকল্প ও বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দরকার।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর সব শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ভয়াবহ একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মুখোশ পরে বাড়ি বাড়ি হামলা করা হচ্ছে, পুলিশ কিছু করছে না। শুধু ভোট নয়, মজুরি, শিক্ষা আর স্বাস্থ্যের কথা বলতে গিয়েও মানুষ এখন নির্যাতিত হচ্ছে।
আনু মোহাম্মদ বলেন, সরকার সব সময় বলছে, তারা খুবই জনপ্রিয় এবং জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। তাহলে তো জনগণ যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারে, সরকারের এমন একটি অবস্থা তৈরি করা উচিত।
নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরিন হক বলেন, 'সংলাপ নিয়ে সরকারের ধারাবাহিক উপেক্ষা দেখে বোঝা যায় একতরফা নির্বাচনের মানসিকতা তাঁদের অনেক আগে থেকেই ছিল। তাঁদের এ পরিকল্পনা দেখে আমরা ভীত, তরুণসমাজ হতাশাগ্রস্ত।'
আলোচনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনের আয়োজন ২০১৮ সালের চেয়েও নগ্ন, বেপরোয়া ও উদ্ধত। এ নির্বাচনের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট ঘনীভূত হবে। আর এই নির্বাচনকে সমর্থনকারী দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি অন্যায্য সুবিধা নেওয়ার সুযোগ পাবে।
আসিফ নজরুলের মতে, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে নির্বিচার মামলা, সাজা প্রদান এবং নির্যাতনের মাধ্যমে সরকার দুটি লক্ষ্য অর্জন করতে চায়। এক. নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় বিএনপির অংশগ্রহণের সুযোগ রুদ্ধ করা। দুই. সাজানো নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের শক্তিকে ধূলিসাৎ করা। এ কাজে সরকার রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে
আলোচনা সভা পরিচালনা করেন আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম। এতে আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, সামাজিক আন্দোলনের কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।